মল্লিকার কথার সাথে অবনী সংযোজন করে, ‘স্থানীয় ডাক্তার বদ্যি থেকে শুরু করে ওঝা গুণীন সবই করেছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। অনেক কষ্টে ওকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছি। আপনি ওকে বাঁচান ডাক্তারবাবু!”
মা-বাবা'কে বাইরে অপেক্ষা করতে বলে, ডাক্তার নন্দী বকুলকে ঘরে ডেকে নিলেন। মাথা নীচু করে ভয়ে ভয়ে এসে ঘরে ঢুকল বকুল। বকুলকে সস্নেহে পাশে বসিয়ে ঘন্টা খানেকের পেশাদারি প্রচেষ্টায় ডাক্তার উদ্ঘাটন করলেন, বকুলের মনের ভিতরে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ভ্রান্ত ভয়ের জন্মসূত্র-রহস্য! তারপরে সেই ভ্রান্তি দূর করে, তাকে প্রকৃত সত্য জানানোর সঙ্গে সঙ্গে অনেক পেশাদারি পরামর্শও দিলেন ডাক্তার মৃন্ময় নন্দী।
এরপরে ডাক্তারবাবুর ডাকে ওনার ঘরে ঢুকে অবনী আর মল্লিকা একরাশ কৌতূহল মাখানো মুখ নিয়ে মেয়ের পাশে গিয়ে বসল। অবনী কিছু প্রশ্ন করার আগেই ডাক্তার নন্দী জানালেন— আপনারা যে বলছিলেন আপনাদের মেয়ে অজানা এক ভয়ে দিনের পর দিন গুটিয়ে যাচ্ছে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন থেকে, এটা সম্পূর্ণ ভুল। একে ভয় বলে না। একে বলে ‘আতঙ্ক’।
—আপনারা হয়তো ভাবছেন, ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে আবার ফারাক কীসের! বিস্তর ফারাক আছে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যখন বাহ্যিক কোনও বাস্তবিক কারণে বিপদের সম্ভাবনা দেখি, তখন তাকে বলে ভয়। আর পর্যাপ্ত বাস্তবিক কারণ ছাড়াই যখন শঙ্কিত হই, তাকে বলে আতঙ্ক। ধরুন, আপনারা তিনজনে মিলে জঙ্গলে বেড়াতে গিয়েছেন আর বকুল মনে করছে যে-কোনও সময় বাঘ এসে ঘাড়ের উপরে লাফিয়ে পড়তে পারে৷ আর বেশি এগোনো উচিত নয়। এটা খুবই বাস্তবিক আশঙ্কা, একে বলে ভয়। আর শহরের কোনও দশতলা বাড়ির উপরের কোনও ঘরে বসে, বকুল যদি ভাবে, এই বুঝি বাঘ আসছে, এই বুঝি সাপ আসছে, তাহলে বুঝতে হবে এই বাঘের শঙ্কা বা সাপের শঙ্কা বাস্তবিক নয়। এটা বকুলের মনের মধ্যে বাসা বাঁধা এক রোগ, যার নাম আতঙ্ক। আর এই আতঙ্ক দীর্ঘদিন ধরে মনের মধ্যে বাসা বাঁধলে, তাকে বলে উৎকণ্ঠা!