অলকেশ আজ অফিস ফেরতা গড়িয়াহাটে আসে হোমের বাচ্চাদের জন্য পুজোর জামাকাপড় কিনতে। প্রতি বছর পুজোর সময় সে ‘স্বপ্নসুন্দর হোম’-এর বাচ্চাদের জামাকাপড় দেয়। নতুন জিনিস পেয়ে ওদের আনন্দটুকু দেখার জন্য শত ব্যস্ততাতেও, অলকেশ এই কাজটা নিজেই করে।
হোমের আরও অনেক সুখ দুঃখের সঙ্গে জড়িয়ে অলকেশ। গাড়ি পার্ক করে হনহন করে হাঁটতে গিয়ে তার নজর পড়ে একটা জটলার দিকে। গড়পরতা বাঙালি জটলা দেখলে ঝামেলার ভয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায় কিন্তু অলকেশ সে প্রকৃতির নয়। জীবনের সব সমস্যার সামনে অনায়াসে দাঁড়ায়। জটলা সরিয়ে এগিয়ে যায় অলকেশ।
একি আসন্নপ্রসবা এক তরুণী রাস্তায় পড়ে আছে! সবাই ঘিরে থাকায় শ্বাস নিতেও অসুবিধে হচ্ছে তাঁর। আহা রে! অলকেশ দৃঢ় হাতে ভিড় সরিয়ে দেয়।
মুখে চোখে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করে, যন্ত্রণার বিকৃতি মুখে চোখে, সঙ্গে নিঃশব্দ কাতর আকুতি। আর সময় নষ্ট করে না অলকেশ, কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে তরুণীকে নিজের গাড়িতে তুলে নেয়। আশেপাশে তাকিয়ে নেয়, তরুণীর সঙ্গে কেউ ছিল কিনা দেখার জন্য। কেউ কোথাও নেই, অপেক্ষা করার কোনও মানে হয় না, গাড়ি ছোটায়।
কাছাকাছি বাইপাসের কাছে অলকেশের পরিচিত একটা নার্সিংহোম আছে, ওখানেই যাবে ঠিক করে। গাড়ি চালাতে চালাতে প্রশ্ন করে, আপনি এই অবস্থায় একা বেরিয়েছেন কেন? উত্তরে কান্না ছাড়া কিছুই শুনতে পায় না।
অলকেশ বলে ওঠে, আচ্ছা আচ্ছা বলতে হবে না, আগে আপনি সুস্থ হন। হাসপাতালে গাড়ি থেকে মেয়েটিকে নামিয়ে স্ট্রেচারের ব্যবস্থা করে নিয়ে যায় এমার্জেন্সিতে। বেড পেতে অসুবিধে হয় না। তবে ডাক্তার অবস্থা বুঝে সব ফর্মালিটি করিয়ে নিয়ে ওটির ব্যবস্থা করলেন। শারীরিক ও মানসিক আঘাতে প্রসবের সময় এগিয়ে এসেছে, সময় নষ্ট করা যাবে না।
অলকেশ বাড়িতে ভুবনদা, মানে ওর সব সময়ের সঙ্গীকে একটা ফোন করে ওটির বাইরে চেয়ারে গা এলিয়ে দিল।
অলকেশের স্বভাব অনুযায়ী এই ঘটনা থেকে ও মেয়েটিকে অসহায় অবস্থায় রেখে বেরিয়ে যেতেও পারছে না। তার সঙ্গে ওটির ভেতরে কী ঘটছে, তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। নার্সদের ছুটোছুটি ব্যস্ততা লক্ষ্য করছে। একটু তন্দ্রামতো এসেছিল, দেখল ওটির ডাক্তারবাবু বেরিয়ে এলেন। অলকেশের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে বললেন, এভরিথিং ইজ ওকে নাও। নার্সদিদি বেরিয়ে এসে বললেন, ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে, বাচ্চা আর মা দুজনেই ভালো আছে।