ঘটকপুকুরে যেতে চাইলে দুটো স্টপেজে নামা যায়। এক, ডাক্তারখানা স্টপেজ। এক কামরার একটা মাটির চালা, সামনে ছোট্ট বারান্দা। একসময় রুগির ভিড় উপচে পড়ত সেই বারান্দায়, ভেতরঘরে নড়বড়ে চেয়ার-টেবিল পেতে বসে থাকত প্রতাপ ডাক্তার। প্রতাপ কাঁড়ার, হোমিওপ্যাথ। এক শিশি সুগার অব মিল্কে এক ফোঁটা ওষুধ ফেলে সাত গাঁয়ের লোককে খাওয়াত, লোকে কপালে হাত ঠেকিয়ে বলত, ‘সাক্ষাৎ ধন্বন্তরি’। সেই ধন্বন্তরি প্রতাপ ডাক্তারকে হঠাৎ একদিন সকালে কেউ দেখতে পেল না। চেয়ার, টেবিল আছে, খোপ-খোপ ওষুধের বাক্স আছে, তক্তাপোশে তেলচিটে বিছানা, নীচে স্টোভ. কালি-লাগা হাঁড়িকুড়ি, দড়িতে ধুতি-গামছা, সব যেমনকার তেমন আছে। শুধু মানুষটা নেই। কেউ বলল, স্বপ্নে আদেশ পেয়ে হিমালয়ে চলে গেছে ডাক্তার, কেউ বলে বাড়ি থেকে খারাপ খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে দৌড়েছে। প্রতাপ ডাক্তার চলে যেতে সাত গাঁয়ের লোক কিছুদিন হা-হুতাশ করল, তারপর নতুন ডাক্তার খুঁজে নিল। কিন্তু ডাক্তারের ঘরটা তেমনই পড়ে রইল, থাকতে থাকতে জরাজীর্ণ হয়ে গেলেও ঠিক দাঁড়িয়ে রইল মাটির ওপর। আর বাস স্টপেজের নাম হয়ে গেল ডাক্তারখানা।

দ্বিতীয় স্টপেজের নাম ঘটকপুকুর স্ট্যান্ড। এখান থেকে রাস্তা একদিকে রায়দিঘি অন্যদিকে কাকদ্বীপের দিকে চলে গেছে। জায়গাটা সবসময়ই সরগরম। তিন-চারটে মিষ্টির দোকান, চপ-ফুলুরিও বেশ কয়েকটা, সারের দোকান, টেলারিং, ইদানীং একটা টিভি মেরামতের দোকানও খুলেছে পঞ্চায়েত প্রধানের ভাইপো নাড়ু। বিকেলে একটা রোল-চাওমিনের চলমান দোকানও বসে। তার গায়ে বড়ো বড়ো করে লেখা ‘ঘটকপুকুর রোল কর্নার’।

ঘটকপুকুর গ্রামে যেতে গেলে এই স্ট্যান্ড থেকে একটু পিছিয়ে আসতে হয়। ডাক্তারখানা স্টপেজে নেমে অবশ্য সোজা ঢুকে গেলেই হল। গাছগাছালির ছায়ায় ছায়ায়, পুকুরে হাঁসের সাঁতার দেখতে দেখতে গ্রামীণ ব্যাংকের পাশ দিয়ে সোজা ঘটকপুকুর হাটতলায় ঢুকে পড়া যাবে। এই হাটতলাটাই গ্রামের প্রাণকেন্দ্র। গ্রামটা তাকে ঘিরে পদ্মের পাপড়ির মতো ফুটে আছে।

ডাক্তারখানা আর স্ট্যান্ড– এই দুই স্টপেজের মাঝে গ্রামে ঢোকার আর একটা তৃতীয় রাস্তা আছে। বাস ওখানে দাঁড়ায় না। যদি দাঁড়ায়, তবে হয়তো স্টপেজটার নাম হতো, কাওরাপাড়া স্টপেজ। ঘটকপুকুরের কোনও মান্যগণ্য লোককে প্রকাশ্যে এ রাস্তায় যাতায়াত করতে দেখা যায় না। আগেকার দিনে বাড়িতে যেমন মেথর ঢোকার আলাদা পথ থাকত, এই রাস্তাটাও তেমনি। ভদ্রসমাজের অস্পৃশ্য, অব্যবহূত। আসলে এই পাড়ার বাসিন্দারাও তাই। পন্ডিতেরা বলেন এরা আগে ছিল জমিদারের পালকিবাহক, কাহার সম্প্রদায়। কাহার থেকে কাওরা। যারা পালকি না বইলে ভদ্রলোকের সভ্যতার গতিরুদ্ধ হয়ে যেত, অফিস-কাছারি, পালা-পার্বণে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যেত, এমনকী পালকি শুদ্ধু গঙ্গায় ডুবিয়ে পুণ্যের থলিটা বোঝাই করা যাদের দাক্ষিণ্যে, তারা নাকি এত নীচু জাত যে গ্রামের ভেতরে তাদের বাস চলে না, তাদের রাস্তাটাও বিপদে না পড়লে কেউ ব্যবহার করে না। তো সেই কাওরাপাড়ায় লকলক করে লাউডগার মতো বেড়ে উঠছে ফুল্লরা কাওরা। তাকে নিয়েই এই গল্প।

आगे की कहानी पढ़ने के लिए सब्सक्राइब करें

ডিজিটাল

(1 साल)
USD10
 
সাবস্ক্রাইব করুন

ডিজিটাল + 12 প্রিন্ট ম্যাগাজিন

(1 साल)
USD79
 
সাবস্ক্রাইব করুন
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...