ধ্রুবর প্রতি নম্রতার খারাপ আচরণের একটাই সঙ্গত কারণ ছিল জোরপূর্বক বিয়ে নম্রতার মতের বিরুদ্ধে বাবা প্রভাসবাবু ধ্রুবর সঙ্গে তার বিয়ে দেন। একসময় নম্রতার ভালোবাসার মানুষ ছিল বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব স্বর্ণাভ মিত্র। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন স্বর্ণাভর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। স্বর্ণাভর সঙ্গে তার বয়সের ফারাক ছিল প্রায় পনেরো বছর। প্রথম প্রথম তাদের সম্পর্ক ছিল শিক্ষক এবং ছাত্রীর। স্বর্ণাভর নবজন্ম নামে একটি নিজস্ব নাট্যদল ছিল। ছাত্রী হিসাবে নম্রতা নবজন্ম নাট্যদলে যোগ দেয়। প্রায় চার বছর সে ওই দলে যুক্ত ছিল। স্বর্ণাভর প্রতি তার ভালোলাগার সূত্রপাত তখন থেকেই। সেই নাট্যদল প্রায় কুড়ি বছর রংমহল থেকে স্টার, নন্দন থেকে রবীন্দ্রসদন মাতিয়ে রেখেছিল বিপুল পরিমাণে দর্শককে।
ছত্রিশ বছরের স্বর্ণাভর প্রতি একুশ বছরের নম্রতার ভালোলাগা, দায়িত্ববোধ, নম্র ব্যবহার নাট্যদলের অন্যান্য সদস্যের চোখ এড়ায়নি। স্বর্ণাভও নম্রতার আচার-আচরণ সম্বন্ধে বিশেষ ভাবে অবহিত ছিল। শিক্ষিতা, সুন্দরী, মার্জিত রুচিবোধের অধিকারী নম্রতার ভালোবাসার কাছে ধরা দেয় স্বর্ণাভ। এই পৃথিবীতে স্বর্ণাভর আপন বলতে কেউ ছিল না। তার যখন পনেরো বছর বয়স, তখন একটা রেল দুর্ঘটনায় বাবা-মা দুজনেই মারা যান। জীবনের সঙ্গে একাকী লড়াই করতে করতে একসময় তার মাথায় জয়ে মুকুট ওঠে।
নম্রতার কাছে আশ্রয় পেয়ে স্বর্ণাভ জীবনের সমস্ত না পাওয়া ভুলে যায়। পাঁচ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তারা দুজনে একে অপরকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। বাবা প্রভাসবাবু থিযোর অভিনেতা স্বর্ণাভর সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হলেন না। তিনিও জেদের বশবর্তী হয়ে সাত দিনের মাথায় সুপাত্রের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেন। শৈশবে মাতৃহারা নম্রতাকে কোলে পিঠে করে অপার স্নেহে মানুষ করার অধিকারবশত প্রভাসবাবু মেয়ে বিয়ে তড়িঘড়ি করে ঠিক করে ফেলেন দিল্লিনিবাসী এক আইপিএস অফিসারের সঙ্গে।
নম্রতা প্রভাসবাবুর এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। বিয়ের ঠিক তিনদিন আগে নম্রতা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। কয়েক মাস স্বর্ণাভর সঙ্গে সে কলকাতার বাইরে চলে যায়। কিছুদিন কাটিয়ে আবার তারা কলকাতায় ফিরে আসে। নম্রতার বাবা, মেয়ে আচরণে চাপা অভিমানবশত কোনও খোঁজখবর নেন না। তিনি ভাবেন যে তাঁর একমাত্র মেয়ে লোকসমাজে তাঁর উঁচুমাথা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে যখন চলে গেছে তখন সে মেয়েে ভুলে যাওয়াই শ্রেয়। ফলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন।