অনবরত চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল স্নেহার। বারবার ফিরে যাচ্ছিল অতীতের ফেলে আসা দিনগুলোয়। আনন্দের মুহূর্তগুলো বারবার স্নেহার স্মৃতিকোঠায় ফিরে আসছিল। আর কিছুক্ষণ পরই বিয়ের পিঁড়িতে বসবে সে তাই বোধহয় এত স্মৃতি ভিড় করে আসছে মনে।
কলেজের সেই প্রথম দিনটা। কেমিস্ট্রি-র ক্লাস চলছিল। প্রফেসর নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের কেমিস্ট্রির জ্ঞান পরখ করার চেষ্টা করছিলেন। একটার পর একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন। স্নেহার আজও মনে পড়ে, ঋদ্ধ একাই প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল। ঋদ্ধর বিষয়ের প্রতি এতটা গভীর জ্ঞান দেখে সেদিনই স্নেহা ঋদ্ধর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে।
কলেজে ওদের ক্লাসে সকলেই নতুন, তাই ছাত্র-ছাত্রীদের একে অপরের সঙ্গে পরিচয় হতে বেশ কয়েকটা দিন কাটল। একদিন স্নেহা কলেজে ঢুকতে গিয়ে দেখল ঋদ্ধ কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারছে। স্নেহা-কে দেখে ঋদ্ধ এগিয়ে এল, ‘এত তাড়াতাড়ি কলেজে কী ব্যাপার। ক্লাস তো প্রায় একঘন্টা পর।’
‘বাবার, এদিকে একটা কাজ ছিল তাই আমিও বাবার সঙ্গেই বেরিয়ে পড়লাম। একটু না হয় লাইব্রেরিতে বসে সময় কাটাব’, হেসে জবাব দিল স্নেহা।
‘তাহলে চল, একটু ক্যান্টিনে বসা যাক’, ঋদ্ধকে না বলতে পারল না স্নেহা। প্রথম দিন থেকেই ঋদ্ধ-র প্রতি একটু বেশি দুর্বলতা বোধ করছিল স্নেহা।
ক্যান্টিনে বসে দু’জনে কফি খেতে খেতে গল্প করছিল। মাঝেমধ্যেই স্নেহা অনুভব করছিল ঋদ্ধর দৃষ্টি ওর মুখের উপর এসে কিছু যেন খোঁজার চেষ্টা করছে। ক্লাসের সময় এগিয়ে আসাতে দু’জনে ক্যান্টিন ছেড়ে ক্লাসরুমে এসে পাশাপাশি বসে পড়ে।
বিকেলে ক্লাস শেষ হবার পর ঋদ্ধ স্নেহা-কে বলে, ‘একটু দাঁড়া। স্যারকে বইটা দিয়ে এক্ষুনি আসছি। একসঙ্গে বেরোব।’
গেট অবধি পৌঁছোতেই ঋদ্ধ চলে আসে। দু’জনে হেঁটে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে যায়। স্নেহা বলে, ‘ঋদ্ধ তুই এবার যা, বাস এলে আমি উঠে পড়ব। কিন্তু তুই তো এখান থেকে বাস পাবি না। তোকে তো একটু হাঁটতে হবে।’