দশাশ্বমেধ ঘাটে সন্ধ্যারতির থিকথিকে ভিড়ের মধ্যে দূর থেকে হঠাৎ একটা চেনা মুখ দেখে পূজা চমকে উঠল। পরক্ষণেই ভাবল- ধুর, এখানে এত দূরে সে আসবে কী করে? তাও আবার এই সন্ধেবেলা? সব তার মনের ভ্রম। চোখ কচলে ভালো করে আবার দেখার চেষ্টা করল।
হ্যাঁ, সেই তো মনে হচ্ছে। পাশে একজন মহিলা, তাকে কিছু যেন বলছে। সে মাঝে মাঝে ঘাড় নাড়ছে আর একদৃষ্টে আরতি দেখছে। ইচ্ছে হল দৌড়ে কাছে যায়, পরক্ষণেই অভিমানে বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। যে তাকে অবহেলা করে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, একটা খোঁজখবরও নেয় না, কেন সে যাবে তার কাছে হ্যাংলার মতো? তার সঙ্গে আবার কীসের কথা?
কিন্তু পারল না। বন্ধুদের একটু দাঁড়াতে বলে ভিড় ঠেলে কাছে গিয়ে দাঁড়াল। দেখল হ্যাঁ রঞ্জনই। সন্ধ্যারতির মৃদু আলোতেও মনে হল চেহারাটা কেমন যেন শুকনো, দুর্বল। এই দু'বছরে বয়সটা যেন বেশ বেড়ে গেছে। অজান্তেই ঠোঁট দু’টো নড়ে উঠল, ‘কেমন আছো রঞ্জনদা?”
ছেলেটি তার দিকে একবার তাকিয়ে ঠান্ডা গলায়, ভালো বলে মুখ ঘুরিয়ে নিল। তার নিস্পৃহ ভাব দেখে পূজা অবাক হয়ে গেল, কী বলবে ভেবে পেল না। পাশের মহিলাটি জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কে? রঞ্জনকে চেন নাকি?'
পূজা মৃদুস্বরে বলল, “আমার নাম পূজা। আমরা কলকাতায় বঙ্গবাসী কলেজে একসঙ্গে পড়তাম।’
—আচ্ছা। এখানে বেড়াতে এসেছ বুঝি?
—না, আমি এখানেই থাকি, আইআইটিতে পড়ি। মাঝে মাঝে গঙ্গারতি দেখতে আসি।
—তাই নাকি? খুব ভালো।
—আপনারা এখানে ?
—একে নিয়ে এসেছি কয়েকদিন হল। কালই চলে যাব।
পূজার কেমন যেন খটকা লাগল। ‘নিয়ে এসেছি' মানে? মুখ ঘুরিয়ে দেখে রঞ্জন উলটো দিকে তাকিয়ে আছে, তার উপস্থিতি যেন জানেই না। আর মহিলার বিধবার বেশ কেন? সে তো জানত ওর বাবা আছে। জিজ্ঞেস করল, , “আপনি...?’
—রঞ্জন আমার ছেলে।
—কিন্তু আপনার এই বেশ, আমি ঠিক...।
মহিলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভারী গলায় বললেন, ‘সে অনেক কথা।”