রান্নার দিদি চলে যেতেই ভিডিওটাতে ক্লিক করে মনে হয়েছিল, মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। আগের দিনের নগ্ন হয়ে চলা মেয়েটির ভিডিও। তফাৎ একটাই সে ভিডিও-র কোণায় তুহিনের স্পষ্ট ঝুলে থাকা মুখ।
বুঝতে পারছিল সর্বনাশের মাথায় উঠল নিজের জীবন। আর তার জন্য অন্য কেউ নয়, ও নিজেই দায়ী। এতদিনের সাজানো গোছানো সংসার মনে হচ্ছিল, খড়কুটোর মতো ভেসে যাওয়ার মুখে।
গুম হয়ে বসেছিল বেশ কিছুক্ষণ। তারপরই বিদ্যুৎঝলকের মতো একটাই নাম ভেসে এসেছিল- প্রশান্ত। একমাত্র যাকে বিশ্বাস করে সবটা বলা যায়।
প্রশান্ত তুহিনের থেকে বছর তিনেকের ছোটো। দুটো পাড়া পেরিয়ে একটা ফ্ল্যাটবাড়িতে থাকে। অফিস যাওয়ার সময় একই ট্রেন ধরে, যদিও প্রশান্তর কর্মস্থল কলকাতার অন্য পাড়ায়। বরাবর বেশ চটপটে, বুদ্ধিমান আর বিশ্বাসী। কখনওই এর কথা ওকে, ওর কথা তাকে করার অভ্যাস নেই। ফোন কেনার আগে যে দু'একজনের পরামর্শ নিয়েছিল তুহিন, প্রশান্ত অন্যতম। ফোনে ব্যাপারটা শুনে রবিবার বিকেলেই তুহিনের ফ্ল্যাটে হাজির হয়েছিল প্রশান্ত। দু'জনে দু'কাপ চা নীরবে শেষ করার পর প্রথম মুখ খুলেছিল তুহিনই, আমার কিন্তু বেশ টেনশন হচ্ছে।
—টেনশনের কিছু নেই। ব্যাপারটা এখন খুব কমন, ফোনে যে আশ্বাসের গলা শুনেছিল, সেভাবেই বলল প্রশান্ত।
—কমন?
—ভীষণই। আর এ কেস এখন সবধরনের মানুষের সঙ্গেই ঘটছে। মেয়েদেরকে পর্যন্ত জড়িয়ে দিচ্ছে এইসব র্যাকেট। বুকের দপদপানিটা আরও বেড়েছিল। উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন করেছিল, 'উপায়?'
—সময়টা একটু বেশিক্ষণ নিয়ে ফেলেছ। যখনই দেখলে ন্যাকেড কেস, বেরিয়ে চলে আসা উচিত ছিল।
—আসলে এত হকচকিয়ে গেছি, গলায় লজ্জাভাব এলেও তা ঢাকার চেষ্টা করেছিল তুহিন, এত জানি না। পুরো ব্যাপারটাই গুবলেট হয়ে গেছিল। যতক্ষণে বুঝেছি, লেট হয়ে গেছে। এখন কী করব, সেটা বল।
নিজের গোঁফের দুপ্রান্তে আঙুল দিয়ে নাড়াচাড়া করে প্রশান্ত বলেছিল, ‘করার আর কী আছে! সব বলে সাইবার সেলে রিপোর্ট করাটাই ঠিক রাস্তা।'
সাইবার মানেই পুলিশ। সারাজীবনে কোনওদিন পুলিশের মুখোমুখি হতে হয়নি তুহিনকে। বুঝতেই পারছে, দুর্ভোগের একশেষ। নেভা গলায় বলেছে, ‘আমাকে যেতে হবে?'