ডেস্টিনেশন গুজরাত। কচ্ছের রন বরাবরই এক মায়াটানে আকর্ষণ করে পর্যটককে। আর ডিসেম্বরের পয়লা থেকে মার্চের সাত তারিখ পর্যন্ত উৎসবের সাজে সেজে ওঠে এই লবণ মরুভূমি। রন উৎসবের সেই রঙিন বাসরে থাকে বাড়তি কিছু আকর্ষণও। একই প্যাকেজে ঘুরে নেওয়া যায় নারায়ণ সরোবর, কোটেশ্বর মন্দির, মাতা নো মাঢ়, লিট্ল রান অফ কচ্ছ, কালা দুঙ্গার হিল, বন্নি গ্রাসল্যান্ড।
জায়গাটায় পৌঁছোনোর আগে বুঝিনি যে, এ কোন মায়ার জগতে পা রাখলাম। কাক জ্যোৎস্নায় ধুয়ে যাচ্ছে চরাচর। সাদা নুন মরুভূমি ধুয়ে যাচ্ছে শ্বেতশুভ্র চাঁদের আলোয়। এ এক অপার্থিব দৃশ্য যা ভাষায় বর্ণনার অতীত।
উৎসব প্রাঙ্গণের এক দিকে তখন জমে উঠেছে রঙের রোশনাই। স্থানীয় মহিলারা কাচ আর এমব্রয়ডারির নকশায় সাজানো ঘাঘরা-চোলিতে সেজে প্রদর্শন করছে গুজরাতের লোকনৃত্য। কোথাও আবার তাঁবুর সামনের হাতায় গান বাজনা করছে স্থানীয় লোকশিল্পীরা।
আলোর মালায় সাজানো হয়েছে গোটা উৎসব প্রাঙ্গণ। থাকার জন্য তাঁবুর সারি। ছোটো ছোটো কুটির। মেহেন্দির নকশা উঠেছে উটের গায়ে। তরুণীদের চোখে কটাক্ষ আর কাজলের মিতালি। গায়ে উলকির সনাতনী আঁকিবুকি। গুজরাতের নিজস্ব সংস্কৃতির উত্তাপ সর্বত্র। আন্তরিকতার সঙ্গে ভলান্টিয়াররা আপনাকে এগিয়ে দেবেন আপনার জন্য নির্ধারিত তাঁবুর দিকে। আলাপ করাবেন স্থানীয় লোকশিল্পী, কারুশিল্পীদের সঙ্গে। ঢোকলা, ফেপরা, ছাস, রোটরা– লোভনীয় গুজরাতি ডিশের স্বাদ মুখে লেগে থাকবে। আর মনে থাকবে ভুজের এই অনবদ্য ল্যান্ডস্কেপ।
একটি ‘বাঙ্গার’ মধ্যে ঢুকে অর্থাৎ মাটির তৈরি গোবর লেপা দেয়াল ঘেরা কুঁড়ে ঘরে ঢুকে চোখ জুড়িয়ে গেল। ঘরের ডেকরে অপূর্ব সব গুজরাতি নকশার ওয়ালম্যাট। ভেজিটেবিল কালার আর কাচের কুচির নকশা তোলা। আমাদের জন্য ওখানেই খাবার ব্যবস্থা হল। খেয়ে তোড়জোড় সাইট সিয়িং-এর। পঞ্চম আইল্যান্ড যাব। তিন দিকে লবণাক্ত জলের মাঝে ভেসে থাকা এক চোখ জুড়োনো দ্বীপ।
এটি ঘুরে রওনা দিলাম কালা দুঙ্গার পিক-এর উদ্দেশ্যে। রনের ওটাই উচ্চতম বিন্দু। পাখির চোখে দেখে নেওয়া যায় লবণ-মরু। অনতিদূরেই পাকিস্তান বর্ডার। উৎসাহীরা এখানে এলে ঘুরে নেন মাণ্ডবী বিচ। অনেকে ওয়াইল্ড লাইফ সাফারি বা উটের পিঠে রন সাফারিও করেন। আমরা ঘুরে নিলাম ধোড়ডো ও হোড়কা নামের দুটি গুজরাতি গ্রাম। এগুলি মূলত গুজরাতি হস্তশিল্পের আঁতুড়ঘর।