সবুজ প্রকৃতির পাশাপাশি নদীগুলি হয়ে উঠেছে সবুজ, খয়েরি, নীল জলে পরিপূর্ণ। উথাল-পাথাল নদীর বয়ে চলা স্রোত এক উপভোগ্য দৃশ্য। চপল ছন্দের চকিত চমকে ধেয়ে চলে নদী। মনে মনে ভাবি আমরা প্রকৃতি ও নদীর দেশের মানুষ। এসো নদী পাহাড়কে ভালোবাসি, বাঁচিয়ে রাখি নদী-পাহাড়-প্রকৃতিকে৷ নির্মেদ প্রকৃতি প্রতিটি মানুষের অন্তরে তরতাজা অনুভূতির সৃষ্টি করুক। পাহাড়ের ধাপ জমিতে আউশের সবুজ শিষের মিষ্টি হাওয়ায় প্রাণে যে দোলা লাগে তাও সত্যিই বিরল।
কতগুলি টুরিস্ট স্পট ছেড়ে গ্যাংটকের রাস্তায় বেরোলাম। মেল্লিতে এসে নামতেই মনটা খুব তরতাজা মনে হল। সেখানে আবার চমৎকার নীল আকাশ, মেঘ নীচে নেমে আসছে, নীচ দিয়ে বর্ষার ঘোলা জল বয়ে চলেছে তিস্তায়। গাড়ি থেকে দেখলাম কতকগুলি শেরপা, ছেলেপুলে নিয়ে কি গতিতেই না পাহাড়ে উঠছে তর তর করে। দেখে মনে হল এ অভ্যেস তাদের সহজাত, পিতৃ-মাতৃ অথবা পর-দাদাদের কুল থেকেই পাওয়া।
বিকেলের সূর্য ঢলেছে এক্ষুনি সন্ধে গড়িয়ে রাত নেমে আসবে, দূরে দেখা যাবে পাহাড়ের কোলে সিঁড়ি বেয়ে কারা যেন জ্বালিয়ে রেখেছে সহস্র, ছোটো ছোটো আলোর দীপ। এ যেন এক নৈস্বর্গিক দৃশ্য, যেন স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে উঠেছি আমরা স্বর্গদ্বারে!
গাড়ি থামিয়ে একটু পাশে দাঁড়ালাম। সবদিকে পিচের বাঁধানো রাস্তা, গাছপালা দিয়ে ঢাকা। পাহাড় বেয়ে নেমে আসছে দুরন্ত ঝরনা, যার কলকল শব্দ মনের মাঝখানটা কেমন যেন নাড়িয়ে দিল। আবার গাড়িতে উঠলাম, মনে হল এ নিয়ে বেশ কয়েকবার হল পাহাড়ি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। শিলিগুড়ি থেকে এখন প্রচুর গাড়ি পাহাড়ি রাস্তাতে দাপিয়ে বেড়ায়, তাই ভ্রমণ পিপাসুদের সকলেই এখন শিলিগুড়ি থেকেই গাড়ি ধরেন।
আবার মনে পড়ে গেল দার্জিলিংয়ের কথা। পথের বাঁকে দেখেছিলাম ছোটো লাইনে টয়ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। একজন নেপালি দাজু বলল— একটু প্রবলেম দেখা দিচ্ছিল ট্রেনটার, তাই এখনও এখানে ট্রেনটি দাঁড়িয়ে। আবার মন-স্টেশনে ধরা দিল আবেগ। চমকে উঠলাম, হাতে অল্প বৃষ্টির জল গড়িয়ে পড়ল! আমরা নীচে নামতে থাকলাম, বৃষ্টির জল টাটা সুমো গাড়িটাকে যেন ধুয়ে দিচ্ছে অঝোরে।