ঋতু বৈচিত্র্য যাকে বাদ দিয়ে নয়, সে দেশ হল আমার দেশ, ভারত। প্রথম ঋতু গ্রীষ্মের পর যার স্থান রয়েছে ক্যালেন্ডারে সে ঋতুই হল বর্ষা। গ্রীষ্মের কাঠফাটা রৌদ্রজ্বালায় যখন সবাই ক্লান্ত তখন এই ঋতুর সাড়ম্বরে আগমন। বসন্ত নিজস্ব মহিমায় ঋতুরাজ হয়ে উঠলেও বর্ষা তার রূপ, রস, গন্ধ, ছন্দে, নিজের গৌরব ও সৌন্দর্যে পরিচিত করে নিজেকে প্রকৃতির রাণি হিসেবে। এ যেন জীবনের এক উৎসবময় উপাখ্যান।
বর্ষা ঋতুর প্রকৃতি দার্জিলিং জেলায়, এক অপরূপ শোভার সাক্ষী করেছিল আমাকে। চারিদিকে সবুজের বসবাস, পাহাড়ের কোলে ঝরনাদের বসতি বড়োই মায়াবী সেই রূপ। পাহাড়ি রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে চারিদিকে শুধু বন আর এখন বর্ষার বৃষ্টি চলছে অনবরত। এর পর মিরিকের রাস্তা ধরে বাসে বা ছোটো গাড়িতে মেঘ-মান্দাসের রাজ্যে এসে পৌঁছানো। আপনিও পাহাড়ি বর্ষার রূপ, রস, গন্ধ উপভোগ করতে এখন থেকেই সফরের পরিকল্পনা করে রাখতে পারেন।
পাহাড়ি দুনিয়ায় বৌদ্ধ মন্দিরের ঐশ্বরিক গুরুত্ব মানুষের কাছে শেষ কথা। তবে চারিদিকের পাহাড়ি গোছানো বৃক্ষরাশির ছোঁয়া, লেকের জলক্রীড়া, মেঘেদের যাতায়াত, নয়নাভিরাম রূপের পসরা ও পেখম খোলা প্রকৃতির বিস্তার, যেন শিল্পরসিক মানুষকে বারে বারে অভিভূত করে। অন্যদিকে তাকালে শিলিগুড়ির রাস্তা ছেড়ে সেবকের দিকে এগিয়ে গেলে বর্ষায় তিস্তা ও সবুজ বনের যৌবনদীপ্ত আদলকে সে মুখোমুখি দাঁড় করায়। যেন বিদগ্ধ এই ভূষিত ধরা নববর্ষার সিঞ্চনে সিক্ত হচ্ছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করে।
পাহাড়ি পথে এই বর্ষায় কার্শিয়াংকে দেখে মনে হয় প্রকৃতি যেন তার রূপ বদলে ফেলেছে। গাছপালা, তরুলতা সবকিছু যেন গ্রীষ্মের দহন থেকে মুক্তি পেয়েছে, পরিতৃপ্তি পেয়ে যেন স্নান করে উঠেছে। চারিদিকে তাকিয়ে দেখছি যেন বর্ষা প্রকৃতির এক আশীর্বাদ। কবিগুরু মংপু থেকেও এই বিশেষ ঋতুকে কাছ থেকে উপভোগ করেছেন। বর্ষা আবাহনের এই লাইন দুটি তাই আবার মনে পড়ে— হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মতো নাচেরে/ আকুল পরান আকাশে চাহিয়া উল্লাসে কারে যাচে রে।