খালপথ কোথাও বিস্তৃত, কোথাও বা সঙ্কীর্ণ। মোটামুটি দুটো বোট কোনওরকমে পাশাপাশি যাতায়াত করতে পারে এমনই সঙ্কীর্ণ। কোথাও জলের উপর ঝুঁকে রয়েছে ডালপালা। যেন নদীর জলে মুখ দেখছে সবুজ প্রকৃতি। নিস্তব্ধ প্রকৃতির মাঝে শুধু একটানা ইঞ্জিনের শব্দ। আধ ডোবা নারকেল গাছের ভিউ অনবদ্য ফটো ফ্রেম তৈরি করে। তবে এই নদীর জলে কুমির বা ডাঙায় বাঘ – কোনওটাই নেই। কেবল দু'ধারে ম্যানগ্রোভের শিকড়গুলো জালের মতো ছড়িয়ে সৃষ্টি করেছে এক মায়াময় পরিবেশ। চলার পথে দেখা পেলাম পানকৌড়ি, বক, রকমারি মাছরাঙা ছাড়াও পেলিকন স্টর্ক, হর্নবিল ও শঙ্খ চিলের মতো কিছু জলজ পাখির।
নৌকো এগোয়। নেইয়ার জলে ঢেউ বাড়ে। নেইয়ার নদী আরও একটু এগিয়ে প্রশস্ত আকার নিয়ে আরব সাগরে পতিত হয়েছে। মিলনরেখায় দেখা যায় হলুদ বালির পাড়। এটাই পুভার দ্বীপ। নদী ও সাগরের সঙ্গমস্থলে জেগে থাকা বড়ো কিছু পাথরের উপর গড়ে উঠেছে একটি স্থাপত্য। মাইকেল এঞ্জেলোর সর্বকালের সেরা ভাস্কর্য “পিয়েতা’র অনুকরণে বানানো হয়েছে এই শিল্প।
মাতা মেরির কোলে শায়িত জিশু। চার্চকে কেন্দ্র করে এই শিল্প ভাস্কর্য নজর কাড়ে। এক সময় বোট ভিড়ল বেলাভূমিতে। যেহেতু কোনও জেটি নেই তাই নামতে হল পায়ের পাতা ভিজিয়ে। জল পেরিয়ে প্রবেশ করলাম পুভার সমুদ্র সৈকতে। এই সৈকতভূমি অনেক বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও চিত্তাকর্ষক। ইচ্ছে হলে এখানে হর্স রাইডও করা যায়।
বিচের অস্থায়ী দোকানগুলিতে বিক্রি হচ্ছে ডাব, তরমুজ, কোল্ডড্রিংস, আইসক্রিম ইত্যাদি। তবে এখানে সমুদ্রস্নানে নিষেধাজ্ঞা আছে। সেই সঙ্গমস্থলে দাঁড়িয়ে শুধু দু'চোখ ভরে দেখে নেওয়ার পালা। একদিকে সাগরের উন্মুক্ত নীল জলরাশি, অন্যদিকে নদীর ধীর শান্ত রূপ। মাঝখানে সোনালি বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে আমরা। নদীতীরে সারিবদ্ধ শতশত নারকেল গাছ, ভাসমান রিসর্ট, ফ্লোটিং রেস্টুরেন্ট, সুদৃশ্য জলযান— সবমিলিয়ে এক অবর্ণনীয় রূপ এই গোল্ডেন স্যান্ড বিচের। মনে হচ্ছে ঈশ্বর (প্রকৃতি) নিজ হাতে তৈরি করেছেন এই বিচটিকে। বেশ কিছুটা সময় সৈকতের সৌন্দর্য চেটেপুটে নিয়ে আবার বোটে উঠে পড়ি।