সন্ধ্যায় হাওড়া থেকে দুন এক্সপ্রেস ধরলাম হরিদ্বার ভ্রমণের জন্য। টাইম-টেবিল মেনে দ্বিতীয় ভোরে আমরা পৌঁছোলাম হরিদ্বারে।
স্টেশন চত্বর থেকেই একটা অটো ভাড়া করে রাস্তাঘাট দেখতে দেখতে আমাদের বুকিং করা নির্দিষ্ট হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা হোটেলে পেঁছে রুম-এ ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ভারি সুন্দর দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল দোতলার ঘর থেকে। সামনেই উন্মুক্ত গঙ্গা। দেখেই মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়। সূর্য দেখি ঘুম ঘুম চোখে উঁকি দিচ্ছে আকাশের ক্যানভাস জুড়ে।
সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় এসে বেতের চেয়ারে আরাম করে হেলান দিয়ে বসলাম। একটু সময় বসে থাকতেই চারিদিকের সুশোভন প্রকৃতি আমার ক্লান্তি যেন কোথায় উড়িয়ে নিয়ে গেল। পেটের মধ্যে কেমন যেন চোঁ চোঁ শব্দ হতেই বুঝলাম খিদে পেয়েে। আগের রাতে তিনটে রুটি আর একটু ফুলকপির তরকারি, খিদে পাওয়ারই কথা! যথা ভাবা সেইমতো কাজ। ঠিক করলাম একটু এগিয়ে পাঞ্জাবি হোটেল থেকে কিছু হরিদ্বারী খাবার খেয়ে আসব। সকলেই রাজি হল, চললাম খেতে। আমি আগে থেকেই নেট সার্চ করে এখানকার দোকানপাঠ, রাস্তাঘাটের বিবরণ জেনে নিয়েছি, যাতে স্বাচ্ছন্দ্য বজায় থাকে।
ভারতের সকল ভ্রমণ স্থলগুলির মধ্যে হরিদ্বার অন্যতম একটি আকর্ষণীয় স্থান। এখানকার প্রাকৃতিক পটভমি ও মনোরম দৃশ্য আমাদের হৃদয়ে পরম আনন্দের সঞ্চার করে। এখানে প্রবাহিত গঙ্গা সকলের মনপ্রাণ প্রসন্ন করে। গঙ্গার নির্মল পবিত্র রূপ ও ধারা যেন জায়গাটিকে বিশ্বের প্রথম সারির ভ্রমণস্থলে পরিণত করেছে। ঋষি, মুনি, সিদ্ধ পুরুষদের আনাগোনায় এই তপস্যাভমি সবসময় সরগরম থাকে। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেই নয়, হরিদ্বারে একটি ধর্মীয় পটভূমিও রয়েছে।
প্রাচীন ঐতিহ্য ও মাহাত্ম্যে এই জায়গাটি খুবই সমাদৃত। দেশের এবং বিদেশের ভ্রমণযাত্রী ও পর্যটকরা এখানে আসেন বহু দূর থেকে। গঙ্গার ধারে শান্ত সমাহিত পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য হরিদ্বার, পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। যেমন নামেতে ধর্মীয় মাহাত্ম্য জড়িয়ে আছে, তেমনই এখানকার পর্যটন মাহাত্ম্যও কম নয়। এখানে অগণিত মন্দির, আশ্রম, শিবালয়, বন-উপবন, বাটিকা, পাহাড়, পর্বতীয় দেবালয় এবং তীর্থকেন্দ্র অবস্থিত। এখানে গঙ্গা, পর্বত প্রদেশ হতে কলকল শব্দ করতে করতে সর্বপ্রথম সমতলভমিতে প্রবাহিত হয়েে। এজন্যই এ-স্থলের নামকরণ হয় গঙ্গাদ্বার।