মেঘালয়ের রাজধানী শিলং এসেছি গতকাল। মেঘমুলুকে এসে মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা নতুন কথা নয়। বৃষ্টির অনুষঙ্গ পেয়ে মনও বিন্দাস। কাল রাত-ভোর শুনেছি বৃষ্টির আওয়াজ। সকালে অবশ্য ধারাবাহিক ধারাপাতের বিন্দুবিসর্গ নেই। তবে মেঘের গতিবিধি দেখে, মেঘালয়ের জলহাওয়ার চটজলদি ভবিষ্যদ্বাণী করা খুবই কঠিন। গতকাল শিলং সাইটটা সারাদিন দেখে, আজ চলেছি বৃষ্টিভেজা চিরসবুজের দেশে। এক কথায় বললে, চেরাপুঞ্জি সাইট সিয়িং।
চেরাপুঞ্জি খাসিয়া পাহাড়ের দক্ষিণ প্রান্তে একটা ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১,৪৮৪ মিটার। চেরাপুঞ্জির স্থানীয় নাম ‘সোহরা’ বা সোরা। স্থানীয় খাসিয়া ভাষায় যার অর্থ কয়লা। ব্রিটিশদের উচ্চারণে সোরা হয়ে যায় চেরা। ছেলেবেলায় পড়া চেরাপুঞ্জির নাম আজও মনের কোণে অনুরণন তোলে। এখন আমরা সেই মেঘপুঞ্জের দেশে। সোহরা বাজার ও সংলগ্ন জনপদ বেশ বড়োসড়োই মনে হল। এখানকার কমলালেবু, দারুচিনি, চেরি, ব্রান্ডি আর কমলালেবুর ফুলের মধু বিখ্যাত। ছুটে চলা গাড়ি জানলা দিয়ে সোহরা বাজারের দিকে তাকালাম। কর্মচঞ্চল মানুষজন, স্কুল ফেরত কচিকাঁচা, পথিক– সব মিলিয়ে মেঘালয়ের জন জাতিগোষ্ঠীর একখন্ড চিত্র।
শিলং থেকে চেরাপুঞ্জি ৫৬ কিমির মতো পথ। ব্রেকফাস্টের পর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। কাল রাতের বৃষ্টিতে ভিজে পথপার্শ্বস্থ গাছপালাগুলো হয়ে উঠেছে আরও সজীব, সবুজ, প্রাণবন্ত। শিলং-সোহারা হাইওয়ে ধরে ছুটে চলেছে গাড়ি। বায়ুসেনা ব্যারাকের পরই কংক্রিটের জঙ্গল থেকে সবুজের সাম্রাজ্যে প্রবেশ করি। পথ যথেষ্ট প্রশস্ত ও মসৃণ। পাকদণ্ডি হলেও, গাড়োয়ালের মতো তেমন দুর্গম বলা চলে না। পথ ছবিতে মাঝে-মাঝেই চোখ আটকায়। বিশেষত ঢেউ খেলানো পাহাড়ি ল্যান্ডস্কেপ আর মাখামাখি সবুজের বৈচিত্র্যে।
পাইন জঙ্গলের উৎরাই ছেড়ে গাড়ি এখন উপত্যকার মাঝে। দেখি চেরি, পিচ, আর নাসপাতির বাগানে কাজ করছে খাসি নারী-পুরুষরা। জানা ছিল, পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত অঞ্চলের শিরোপো আর চেরাপুঞ্জির দখলে নেই। তার গড় বৃষ্টিপাত কমে হয়েছে ১২,০২৯ মিলিমিটার। কিন্তু ছোটোবেলার ভূগোল বই-এর স্মৃতি কি অত সহজে ভোলা যায়! মূলত গাছপালার অপ্রতুলতায় কম বৃষ্টির একটা বড়ো-সড়ো কারণ। এই পাহাড়ি পথে তাই এখন আর তেমন বড়ো-সড়ো গাছপালার অস্তিত্ব মেলে না। ফলে সামনে শুধুই সবুজ গাছের ঘোমটা পড়া নাতিদীর্ঘ পাহাড় সারি। এই পাহাড়ের উপরে সামান্য মাটির আস্তরণ থাকলেও, পাহাড়ের নীচে সবটাই পাথুরে জমি।