উত্তর-পূর্ব ভারতের দক্ষিণতম রাজ্য মিজোরাম। ১৯৮৭ সালে মিজোরাম ভারতের ২৩তম রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি পায়। আর মিজোরামের একেবারে পুবে চামফাই জেলা। মিজোরামের বিরাট অংশে সীমান্তবর্তী অংশ হল বিদেশ– মায়ানমার ও বাংলাদেশ। চামফাই জেলার পুরো পুবের সীমান্ত তো মায়ানমারের সঙ্গে। মিজোরামে একটাই বিমানবন্দর লেংপুই। কলকাতা থেকে সরাসরি সংযোগ রয়েছে এই লেংপুইর সঙ্গে। আর লেংপুই থেকে মিজোরামের রাজধানী আইজলের সড়ক দূরত্ব ৪২ কিমি।
আইজলে দুদিন, লুংলেইতে ২ দিন আর খার্ডবং-এ একটা দিন কাটিয়ে আমরা চামফাইয়ের দোরগোড়ায়। আমাদের সঙ্গে ড্রাইভার টাইটি ও গাইড বাইরা। দুজনেই মিজো খ্রিস্টান। টাইটি মধ্যবয়স্ক আর বাইরা তো একেবারে যুবক, সবে গ্র্যাজুয়েট হয়েছে। মিজোরামের পুরোটাই প্রায় পার্বত্য অঞ্চল, গ্রামের রাস্তাঘাট বেশ খারাপ তবে শহরের রাস্তাঘাট মন্দের ভালো। চামফাই নীল পাহাড়ে ঘেরা এক সবুজ উপত্যকা। ধান চাষের জন্য এ অঞ্চল বিখ্যাত তাই বলা হয় Rice Bowl of Mizoram। বিশাল এলাকা জুড়ে ধানখেত অধিকাংশ জায়গায় ধানকাটা হয়ে গেছে তবে কিছু এলাকায় এখনও পাকা সোনালি ধানে খেত ভরা।
ধানখেতের মধ্যে দিকে আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে আমরা পাহাড়ে উঠছি। গন্তব্য চামফাইর টুরিস্ট লজ। চামফাই জেলা সদর উচ্চতা ১৬৭৮ মিটার। যতদূর দেখা যায় শুধু ঢেউখেলানো নীলাভ পাহাড়ের বিস্তার। যতই ওপরে উঠছি, এবার একটা দুটো করে বসত বাড়ির দেখা মিলছে। নিরালা নিভৃতে টুরিস্ট লজের অবস্থান। টুরিস্ট লজ ঘিরে গাছগাছালিতে ভরা বাগান আর রয়েছে পর পর টুরিস্ট কটেজ। আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে একটি টুরিস্ট কটেজে।
প্রত্যেকটি কটেজই খুব সুন্দর। বাঁশ ও বেতের আসবাবপত্রে সাজানো। ঘরের সেন্টার টেবিলে একটি বাইবেল রাখা রয়েছে। ঘরের পিছনে খোলা বারান্দা। বড়ো বড়ো শাল ও সেগুন গাছের ফাঁক দিয়ে দূরে চামফাই উপত্যকা দেখা যাচ্ছে। দূরে নীলপাহাড় আর উপত্যকায় ধানজমি, দু-একটা বাড়িঘর আর তার মধ্যে দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা একদম ছবির মতো। এখনও দিনের আলো রয়েছে, বিকেল ৪টে বাজে। এক কাপ করে কফি আর টোস্ট-ওমলেট খেয়ে আমরা চামফাইয়ের পথে নামি। বাইরা আমাদের নিয়ে চলল সানসেট পয়েন্টের উদ্দেশে। জানাল এখানে দুটি সানসেট পয়েন্ট আছে, একটি হল সারকিট হাউস চত্বর-- আর একটি হল শহরের জল সরবরাহের ট্যাঙ্কের ছাদ থেকে।