জায়গাটায় পা রাখা মাত্র বুঝতে বাকি থাকে না, ব্রিটিশ শাসনকালে কেন সাহেবরা ডালহৌসির এমন অনুরাগী হয়ে গিয়েছিলেন। তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি-র এই পাহাড়ি উপত্যকা এতটাই পছন্দ হয়ে গিয়েছিল যে, তিনি এটিকে অবসরযাপনের হিলস্টেশন-এ পরিণত করতে দারুণ উদ্যোগী হয়ে ওঠেন। একদিকে পীর পাঞ্জালের সঙ্গবদ্ধ সারি, অন্যদিকে ধৌলাধার পাহাড়ের নিশ্ছিদ্র প্রহরা--- এমন মায়াময় ল্যান্ডস্কেপ-ই তো পর্যটকদের চিরকাল টেনে আনে।
সবুজ মখমলি ঘাসের উপত্যকায় দাঁড়িয়ে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে নিতে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিন। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নীচে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই দেখা যাবে রবি, বিয়াস আর চাক্বি নদীর নীল জলধারা। উপত্যকা জুড়ে দেওদার, চির, কয়াল প্রভৃতি গাছের ঘন সবুজ আলিঙ্গন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত এই হিলস্টেশন, এক আকর্ষণীয় হলিডে ডেস্টিনেশন। হাজার চারেক লোকের বাস এই শহরে। চাম্বা জেলার অন্তর্গত এই জায়গাটি বছরের যে-কোনও সময়ই আলাদা আলাদা সৌন্দর্য নিয়ে ধরা দেয় পর্যটকের চোখে।
অন্যান্য পাহাড়ি শহরের মতো এখানেও সর্পিল পথ বেয়ে বেশ খানিকটা চড়াই পথে পৌঁছোনো যায় উপত্যকায়। পাইনের জঙ্গলের অপূর্ব শামিয়ানা ভেদ করে সূর্যের লুকোচুরি খেলা। লোভ সামলাতে পারবেন না আপনার ডিএসএলআর-এর লেন্স-এ সেই সৌন্দর্যকে ভরে নেওয়ার।
ডালহৌসিতে বিলাসবৈভবে যারা থাকতে চান, তারা বেছে নেন পাহাড়ের ঢালের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত ‘আমোদ রিসর্ট’। এই রিসর্ট-এর ঘরের দেয়ালে মাটির আস্তরণ, যাতে অভ্যন্তর গরম থাকে। রিসর্ট তৈরির সময় বৃক্ষ নিধন না হওয়ায়, গাছে ঘেরা নিরিবিলি রিসর্ট আর সেই সঙ্গে অপূর্ব এক নার্সারি।
সর্পিল পথ পেরিয়ে চলে যান শহরের প্রাণ কেন্দ্র গান্ধিচক-এ, যেটি ঘিরে গড়ে উঠেছে শহরের বসতি। নানা মানের হোটেল, বাজার, গাড়ির টার্মিনাস, বেশ কিছু ছোটো-বড়ো খাবারের দোকান নিয়ে সরগরম অঞ্চল। ব্রিটিশ শাসনের সময় রিট্রিট প্যারেড-এর জন্য বাছা হয়েছিল এই স্থানটিকে। সুভাষচন্দ্র বসুর একটি মূর্তি স্থাপিত আছে সুভাষ চকের মাঝখানে। এটিও একটি টুরিস্ট পয়েন্ট। জিপিও স্কোয়ার একটি ছোটো চার্চ--- সবমিলে ভারি নিরালার ঠাঁই ডালহৌসি। একদিন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন পঞ্চপুলা দেখতে। এখানে দেখা মিলবে একটি পাহাড়ি ঝরনার। পঞ্চপুলা থেকে এক কিলোমিটার দূরে সাতধারা বা সপ্তধারা। ঝরনায় জল গড়িয়ে পড়ছে পাহাড় বেয়ে।