আজকের নেদারল্যান্ডসের আর্থিক সমৃদ্ধির পিছনে ইন্দোনেশিয়ার অনেক অবদান রয়েছে। প্রায় চারশো বছরের অত্যাচার, শোষণ, নিপীড়ন ইন্দোনেশিয়ার মানুষদের আর্থিক ভাবে দুর্বল করে দিলেও তাদের মনোবলকে ভেঙে দিতে পারেনি। বছরের পর বছর তারা ডাচ শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গেছে। ১৮২৫ থেকে ১৮৩০ পর্যন্ত চলেছিল ‘জাভা ওয়ার'। তারপর শুরু হয় ‘আচেহ ওয়ার'। ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল এই যুদ্ধ।
ইন্দোনেশিয়ার লোকেদের উপর অত্যাচার আর শোষণের খেলা কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডাচদের তাড়িয়ে জাপানিজরা ইন্দোনেশিয়া দখল করে। যারা এতদিন ধরে ডাচদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল, জাপানিজদের অত্যাচার আর শোষণ দেখে হয়তো সেদিন তারাও লজ্জা পেয়েছিল।
তবে সব খারাপের হয়তো একটা ভালো দিক থাকে। এই সময় থেকেই ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি হতে শুরু করে। সুকর্ণ আর মোহাম্মদ হাত্তার মতো দেশপ্রেমীরা স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেরণায় দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেন। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর, ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদীরা সুকর্ণ এবং হাত্তার নেতৃত্বে ১৭ আগস্ট স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়ে আজ আমাদের দিন শুরু হল। সকালে উঠেই হোটেলে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপিত হল। পতাকা উত্তোলন, ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় সংগীত পরিবেশন থেকে শুরু করে হোটেলের গেস্টদের জন্য স্পেশাল ব্রেকফাস্ট, কোনও কিছুই বাদ গেল না।
এরপর গেলাম জাকার্তার মারদেকা স্কোয়ার। এখানেই রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ, যা মোনাস নামে পরিচিত। ১৩২ মিটার লম্বা এই স্মৃতি স্তম্ভটি ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক। এই স্তম্ভের চূড়ায় রয়েছে একটি গোল্ডেন ফ্লেম, যেটা ইন্দোনেশিয়ার জনসাধারণের সহনশীলতা আর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। এর রাজকীয় সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক তাৎপর্যের জন্য এটি ইন্দোনেশিয়ার সব থেকে পরিচিত ল্যান্ডমার্ক। এই মনুমেন্টের ভেতরে একটি মিউজিয়ামও রয়েছে। সোমবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন মনুমেন্ট আর মিউজিয়াম দুটোই খোলা থাকে ট্যুরিস্টদের জন্য। রাতে এই মোনাস সেজে ওঠে এক অপরূপ আলোর অলংকারে।