ওক পাইন ঘেরা পাহাড়ি আলোছায়ার মাঝে আকাশে আনমনা মেঘ কথা কয়। কুয়াশার আবডালে জেগে থাকে গ্রামগুলি দূরে দূরে। কুমায়ুন হিমালয়। কুমায়ুন মানেই বরফাবৃত পাহাড় ও হিমবাহ। হরিতবর্ণ অরণ্য ও পার্বত্য ঢালে শ্যামল বুগিয়াল। হ্রদ ও ফেনায়িত জলপ্রপাত। পাখপাখালি ও পশুখামার। প্রজাপতি ও ফুল্লকুসুমিত প্রান্তর। মেলা ও উৎসব। পুরাণকথা ও ইতিহাস। এই সমস্ত কিছুই একত্রে উদ্বেলিত হয় কুমায়ুনের প্রায় প্রতিটি শৈলশহরে।
উত্তরাখণ্ডের উত্তরপূর্ব হিমালয়ের অংশটুকু নিয়ে কুমায়ুনের বিস্তার। হিমালয়ের কোলে ৬টি পাহাড়ি জেলা আলমোড়া, বাগেশ্বর, চম্বাবত, নৈনিতাল, পিথোরাগড়, উধম সিং নগর নিয়ে কুমায়ুনের বিস্তৃতি। যেখানে রযেছে একাধিক শৈলশহর, যেমন নৈনিতাল, আলমোড়া, বিনসর, কৌশানি, মুক্তেশ্বর, রামগড়, রানিখেত, মুন্সিয়ারি, চকৌরি, দিনাপানি, বৈজনাথ, ধওলছিনা ইত্যাদি।
আলমোড়া:
কাশ্যপ পাহাড়কোলে পাইন, ওকের সরলবর্গীয অরণ্যের মাঝে, কুমায়ুন হিমালয়ের দ্বিতীয বৃহত্তম এবং মহাব্যস্ত বাণিজ্যিক শহর আলমোড়া। ইতিহাসের পাতা উলটে দেখা যায়, অতীতে চাঁদ সাম্রাজের রাজা কল্যাণ চাঁদ-এর হাতে ১৫৬০ সালে গড়ে ওঠে এই ছোট্ট পাহাড়ি রাজ্যটি। ৫৯৪২ ফুট উচ্চতায়, ৭.৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে রাজ্যটি চাঁদ সাম্রাজ্যের অধীনে থাকলেও পরে ১৭৮৯ সালে গোর্খা, তারও পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসনের অধিকারে আসে।
লোকশ্রুতি আলমোড়া পাহাড়ি অঞ্চলে এক ধরনের পিঙ্গলবর্ণের ক্ষুদ্র উদ্ভিদ দেখা যায়, যার স্থানীয নাম কিলমোড়া বা ভিলমোড়ি গাছও বলা হয়। সেই কিলমোড়া বা ভিলমোড়ি থেকে পরে আলমোড়া হয়েছে। তবে চাঁদ সাম্রাজ্যের পূর্বে এই অঞ্চলের নাম ছিল রাজপুর। সেই সময়ে রাজা ভীষ্ম চাঁদ অঞ্চলটির নাম পালটে রাখেন আলমনগর। আলমোড়া নামটি সেখান থেকেও আসতে পারে বলে দ্বিমত রয়েছে।
আলমোড়াকে কুমায়ুনের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। বর্তমানে অত্যাধিক যানজট, ফলত ওয়ান ওয়ে ট্র্যাফিক, জনবসতি, দোকানবাজার, হোটেল, জনবহুল শৈলশহর। আলমোড়া থেকে এক্কেবারে খালি চোখে বাধাহীন ভাবে দেখা যায় বরফাবৃত পঞ্চচুল্লি, নন্দাদেবী, নন্দাকোট, ত্রিশূল, চৌখাম্বা ছাড়াও আরও বেশ কিছু দিগন্তব্যাপী হিমশৃঙ্গরাজি। হিমালয়ের কাছে নতজানু হলেই পালটে যায় জীবনবোধ।