রাউরকেলা-ভুবনেশ্বর ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ১০ মিনিট দেরি করে প্ল্যাটফর্ম ছাড়ল ভোর ৫টা ২০ নাগাদ। কাক-ভোরে চেপে বসেছি ট্রেনে। প্রথম গন্তব্য ঢেনকানল। সেখান থেকে সপ্তশয্যা, কপিলাস ও জোরান্ডা যাওয়ার ইচ্ছে।
সকাল পৌনে ৬টায় রাজগাঙপুর এবং সোয়া ৬টায় বামরা পেরিয়ে গেলাম। শুরু থেকেই কাচের জানলার বাইরে দেখছি গাছে গাছে রক্তবর্ণ পলাশের মেলা। ফসল-কেটে-নেওয়া চাষজমি। শাল, মহুয়া, আম ও বাঁশ গাছই চোখে পড়ছে বেশি। মাঝে মাঝে তাল ও খেজুর গাছ। কখনও আবার ইউক্যালিপ্টাস প্ল্যান্টেশন। ধীরে ধীরে ঘুম ভাঙছে লোকালয়ের। গাড়ি ধুতুরা পৌঁছোল ৬টা ৪৫-এ। মাঝে দুটো সিমেন্ট কারখানা পেরিয়ে ঝাড়সুগুদায় ট্রেন এসে থামল আরও ১০ মিনিট পরে। রেনগালি পেরিয়ে ট্রেন সম্বলপুর সিটি জংশনে পৌঁছোল পৌনে ৮টায়। ফ্লাস্ক থেকে গরম চা নিলাম, সঙ্গে বিস্কুট। ঢেনকানল স্টেশনে এসে পৌঁছোলাম বেলা ১১টা ২০ মিনিটে।
ওভার ব্রিজ পেরিয়ে প্ল্যাটফর্মের বাইরে এলাম। স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিল ৪-৫টা অটো। আগে থেকে ঠিক করা এক হোটেলের নাম বলে অটোয় চড়ে বসলাম। প্রায় ১৫ মিনিট গাড়ি চলার পর আমরা এসে পৗঁছোলাম জাতীয় সড়ক ৫৫-র পাশেই অবস্থিত সুন্দর, বাগান-ঘেরা হোটেল। হোটেলের প্রকৃত অবস্থান সম্বলপুর-কটক হাইওয়ের পাশে ঢেনকানলের মহিসাপোত রোড-এ।
আমাদের বুকিং আগেই করা ছিল তাই একতলায় আমাদের জন্য নির্ধারিত ঘর পছন্দ না হওয়ায় আমাদের লাগেজ দোতলার একটি ঘরে পাঠানো হল। এই ঘরটি চমৎকার। কাচের জানলার পর্দা সরাতেই চোখে পড়ে নীচে সুদৃশ্য বাগান, দৃষ্টি প্রসারিত করলে হাইওয়ে এবং তার পিছনে সবুজ জঙ্গল।
একে একে স্নান সেরে নিলাম। বেশ খিদে পেয়েছে– সেই কাক-ভোরে বেরিয়েছি যে! নীচে নেমে চলে এলাম সাজানো ডাইনিং রুমে। সরু চালের ভাত, ডাল ফ্রাই, মিক্সড ভেজিটেবল এবং ফিশ কারিতে জমিয়ে লাঞ্চ সারলাম। তখনই হোটেল কর্মচারীর ফোন এল। সপ্তশয্যা যাওয়ার জন্য গাড়ির কি ব্যবস্থা হল জানতে চাইলে সে বলল, একটা অটো জোগাড় করা হয়েছে। আমি বললাম, কোনও অসুবিধে হবে না। মাত্র কয়েক কিলোমিটারের পথ তো। ঠিক হল, বিকেল ৪টের আগেই আমরা রওনা হব।