নির্ধারিত দিনে হোটেল থেকে প্রাতঃরাশ সেরে একটা এসইউভি গাড়িতে চড়ে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম দর্শনের উদ্দেশ্যে। আমাদের প্রথম গন্তব্য স্থল নির্ধারিত হল গুলমার্গ, সোনমার্গ এবং তুলমুল-ক্ষীর ভবানি।
গুলমার্গ
আজকের গন্তব্য ‘গুলমার্গ”। যথারীতি, প্রাতঃরাশ সেরে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম শ্রীনগরের হোটেল থেকে গুলমার্গ দর্শনের উদ্দেশ্যে। শ্রীনগর থেকে গুলমার্গের দূরত্ব ৫২ কিলোমিটারের মতো। সময় লাগে ঘণ্টা দেড়েক। শ্রীনগর থেকে গুলমার্গ পর্যন্ত যাত্রাপথের অধিকাংশটাই সমতল।
শ্রীনগর ছাড়িয়ে বাইরে বেরোতেই চলে এল 'বদগাম' জেলা। বদগাম জেলার নরবাল, মারগাম, দ্রুর, রেরে, ফিরোজপুর- ব-এর মতো একের পর এক গঞ্জের দু-ধারে বরফাচ্ছাদিত পীর পাঞ্জাল পর্বতমালা। সেই সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে এসে পড়লাম ‘ট্যাঙ্গমার্গ’-এ। এখান থেকে শুরু পাহাড়ে চড়ার সর্পিল পাকদণ্ডি পথ। ট্যাঙ্গমার্গ থেকে গুলমার্গ পর্যন্ত শেষ দশ কিলোমিটার সর্পিল পাকদণ্ডি অতীব সুন্দর অথচ ভয়ংকর পথ-যাত্রা! রীতিমতো শরীরে শিহরণ জাগায়।
দুর্গম পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে গুলমার্গে প্রবেশ করতেই, নজরে পড়বে চারিদিকে বরফ আর বরফ। আর তার মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে লাল রং-এর এক শিব মন্দির। এই মন্দিরের নাম 'মহারানি মন্দির' বা ‘মোহিনেশ্বর শিব মন্দির'। ১৯১৫ সালে এই শিব মন্দির নির্মাণ করেছিলেন মহারানি মোহিনী সিং সিসোদিয়া। তিনি ছিলেন মহারাজা হরি সিং-এর স্ত্রী।
রাজা-রানি যখন গুলমার্গের শৈলাবাসে গ্রীষ্মযাপনে আসতেন, তখন মহারানি প্রত্যহ সকালে এই শিব মন্দিরে শিব-অর্চনায় যেতেন। মহারানি শিবমন্দিরের দেবতাকে সকলে ‘মোহিনেশ্বর শিব' নামে সম্বোধন করে থাকেন। এই মন্দির আমাদের অনেকের কাছেই দীর্ঘ পরিচিত। হিন্দি ছবি ‘আপ কি কসম'-এ রাজেশ খন্না ও মুমতাজের কণ্ঠে “জয় জয় শিব শঙ্কর' গানটির চিত্রায়ণ হয়েছিল এই ‘মহারানি শিব মন্দির' প্রাঙ্গণেই।
শরীরে শিহরণ জাগানো দীর্ঘ এক পাকদণ্ডি পথ পেরিয়ে, গুলমার্গের এই মহারানি শিব মন্দির প্রাঙ্গণে পৌঁছনোর পরে, তার বরফাচ্ছাদিত সিঁড়িতে পা রাখার পূর্বে সেনাবাহিনীর জওয়ানরা যেভাবে সমরাস্ত্র উঁচিয়ে তা প্রহরা দিচ্ছে, তা দর্শনের পরে কম শিহরণ জাগে না পর্যটকদের শরীর-মনে!