কাশ্মীর ভ্রমণের বহুল চর্চিত বিষয়াবলির সবিশেষ বিবরণ দিতে গেলে, প্রয়োজন সুদীর্ঘ এক পরিসরের। কাশ্মীর ভ্রমণকালে দর্শন প্রাপ্তি হয়েছে, এমন এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বেশ কয়েকটা জায়গার কথা আজ বলব যা প্রথাগত সফরসূচির মধ্যে অনেকে রাখেন না।
হরি পর্বত
‘হজরতবাল’ মসজিদ দর্শন সেরে আমাদের গাড়ি এসে পৌঁছোল ‘হরি পর্বত'-এর প্রান্তে। হরি পর্বতের উপরে রয়েছে সুবিশাল এক দুর্গ। এই দুর্গের বাহিরের প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন মোঘল সম্রাট আকবর, ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দে। ১৮০৮ সালে দুরানি সম্রাট আটা মহম্মদ খান এই দুর্গটি নির্মাণ করেছিলেন। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট এই পাহাড়ের মাথায় সুউচ্চ এক দণ্ডের উপরে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এই হরি পর্বতের একদিকে অবস্থিত ডাল লেক এবং তার অপর দিকে হরি পর্বতের পশ্চিম-গাত্রে অবস্থিত 'সারিকা দেবীর' মন্দির।
জলভব-সারিকা দেবী
কাশ্মীরি হিন্দুরা মনে করেন, পুরাকালে ‘জলভব' নামক এক অসুর এই হরি পর্বত সংলগ্ন অঞ্চল দখল করে নিয়েছিল। তার হাত থেকে এই পবিত্র হরি পর্বতকে রক্ষা করতে, হিন্দুরা সমবেতভাবে দেবী পার্বতীর কাছে প্রার্থনা করেন। তখন দেবী পার্বতী এক পক্ষীর রূপ ধারণ করে, এক সুবিশাল প্রস্তরখণ্ড ঠোঁটে ধারণ করে 'জলভব’ অসুরের মস্তকে নিক্ষেপ করেন। অসুর নিধন হয়। এরপর থেকে পার্বতীকে ‘সারিকা দেবী' রূপে বন্দনা করা শুরু হয়।
দেবী এখানে শক্তিস্বরূপা জগদম্বা ভগবতী সারিকারূপে পূজিতা হন। ‘শ্রী-চক্র' নামক প্রস্তর খণ্ডের উপরে বিরাজিতা, সিঁদুরবর্ণা অষ্টাদশ হস্ত বিশিষ্টা দেবী গোটা কাশ্মীরের হিন্দু ভক্তদের ঘরে ঘরে পূজিতা হন।
শঙ্করাচার্য পাহাড়
হরি পর্বত থেকে ফিরে, ডাল লেক সংলগ্ন বুলেভার্ড রোড ধরে আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলল এক হাজার একশো ফিট উচ্চতাবিশিষ্ট ‘জাবারওয়ান' পর্বত শৃঙ্গের উদ্দেশ্যে। বর্তমানে এই পর্বত শঙ্করাচার্য পাহাড় নামেই খ্যাত। পাহাড়ে ওঠার পথের মুখেই সেনাবাহিনীর জওয়ানরা প্রত্যেক গাড়ি থেকে পর্যটকদের নামিয়ে দিয়ে, গাড়িটিকে এগিয়ে যেতে আদেশ করল। তারপরে সকল পর্যটককে সেনাক্যাম্প-এ নিয়ে এল। সেখানে প্রত্যেক পর্যটকের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, আধারকার্ডের কপি সংগ্রহ করে এবং তাদের রেজিস্টারে সবকিছু নথিবদ্ধ করার পরে, পুনরায় গাড়িতে চড়ার অনুমতি দিল।