সন্দেহ ছিল উত্তরকাশী আজ পৌঁছোতে পারব কিনা? হলও তাই। ঘটনাচক্রে পড়ে পৌঁছোতে পারলামও না। ফলে কেদারযাত্রার পথে পিছিয়ে গেলাম অনেকটাই। Gangotri মন্দিরে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পুজো দিতেই লং-টাইম অতিক্রান্ত। হোটেল থেকে লাঞ্চ সেরে সকলকে ডেকেডুকে গাড়িতে তুলতেই, বিকালের ঘড়িতে ছ’টা ছুঁই ছুঁই। ভৈরবঘাঁটি, লংকা, হরশিল পেরিয়ে গাড়ি যখন গতি বাড়িয়ে ছুটছে, তখনও সব ঠিকঠাক। কিন্তু এরপরই পাহাড়ি রাস্তা হয়ে গেল অফিস টাইমের কলকাতা। দু’হাত যাচ্ছে তো মিনিট দশেক বেফালতু অপেক্ষা।
শেষমেশ গাড়ি ডেড স্টপ। কারণ যাই হোক, বনধ-রোকোর নোংরা রাজনীতি নেই শান্তির গাড়োয়ালে। শুনলাম একটা বড়ো গাড়ি বিগড়েছে ইউ-টার্ন পাহাড়ি বাঁকে। প্রমাদ গুনি। সঙ্গের অবাঙালি যাত্রীরা জোরে জোরে হনুমান চালিসা শুরু করল। অপেক্ষাকে প্রলম্বিত করতে কোরাস চালিসায় গলা মেলাচ্ছি, বসার মুদ্রা বদল করছি, মশা মারছি আওয়াজ করে। আর অন্ধকারের পর্দা টাঙানো আকাশে তারা ফ্যামিলিদের আইডেনটিফাই করছি। বজরংওয়ালির করুণায় কিনা জানি না, শেষমেশ গাড়ি ছাড়ল।
রাত বারোটার ঘর ছুঁয়ে। সকলেই যারপরনাই বিধ্বস্ত, পরিশ্রান্ত। শরীর-মন খাওয়ার চেয়ে পরিপাটি বিছানা খুঁজছে। কিছুটা চলার পরই আবার গতিরুদ্ধ গাড়ির। এবার মেষপালের চক্রব্যূহে। এই গভীর রাতে দুর্গম পাহাড়ি পথ ধরে মেষপালকরা মেষপালসহ স্থানান্তরিত হচ্ছে এক উপত্যকা থেকে অন্য পাহাড়ি উপত্যকায়। সভ্যতার ঊষালগ্নে খাদ্য সংগ্রাহকদের মতো এরা চলেছে চারণভূমির খোঁজে। ভাটোয়ারি নামক স্থানে অনেক চেষ্টায় অধিক অর্থের বিনিময়ে জুটল রাত-আস্তানা। আসলে সকল আটকে পড়া গাড়ির যাত্রীরাই হোটেলের অনুসন্ধানে নেমেছে। ফলে হোটেল রেট তো বাড়বেই। খাওয়ার কথা ভুলে রাত দুটো পনেরোয় গেলাম বিছানায়। বাইরে তখন আকাশ ভেঙে শুরু হয়েছে বৃষ্টি।
পরদিন ঘুমের কোটাপূরণে বেলা গড়াল। বৃষ্টি কিন্তু রাতের অন্ধকারের সঙ্গে আজও বিদায় নেয়নি। কর্পোরেশন জলের মতো ঝরাচ্ছে অল্পবিস্তর। থামলে তো চলবে না। তাই মনের প্রশ্রয়কে পাত্তা না দিয়ে, বৃষ্টি মাথায় ছুটল গাড়ি। সহযাত্রীদের ভক্তির ভাণ্ডার পরিপূর্ণ করতে চলতি রাস্তায় দাঁড়ালাম পাইলটবাবার আশ্রমে। ওপথে না গিয়ে ক্যামেরা বার করি আমি। ক্যামেরায় বৃষ্টির ছাঁট বাঁচিয়ে ছবি ধরি।