বেলা সাড়ে এগারোটায় চড়ে বসলাম এক সাদা ইন্ডিগোতে। ভারাক্রান্ত মনে বিদায় জানালাম সুন্দরী মুন্নারকে। এবার এগোবো পেরিয়ার দেখার অভিলাষে।
থেকাডির পথে পাহাড়ি রাস্তায় প্রায় আধঘন্টা গাড়ি চলার পর আমরা এসে পৌঁছোলাম লক হার্ট এস্টেট-এর কাছে। সুন্দর এক জায়গা! জোরে বইছে ঠান্ডা হাওয়া। এই জায়গা নাকি যে-কোনও মুহূর্তেই মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। রেলিংয়ের কাছে এলে দেখা যায় কলকাতাস্থিত শিল্পপতি মি. গোয়েঙ্কার বিশাল এস্টেট। চারপাশের সবুজ পাহাড় ও টি-এস্টেটগুলির সৌন্দর্য অসাধারণ। গাড়িতে চেপে মসৃণ পথে আবার এগিয়ে চললাম এবং আধঘন্টা পরে এসে পৌঁছোলাম পেরিয়াক্যানাল ফল্স-এর কাছে। প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতা থেকে সাদা, সফেন জলধারা লাফিয়ে লাফিয়ে নীচে নেমে আসছে। এখানে বেশ কয়েকজন বাঙালি পর্যটককে দেখলাম। এক দোকানে বসে স্থানীয়, সুমিষ্ট আনারস-এ রসনা মেটালাম।
এবার গাড়িতে চেপে কিছুদূর এগোতেই চোখে পড়ল টাটা কোম্পানির চা-বাগান, ফ্যাক্টরি এবং বিক্রয়কেন্দ্র। এবার দুই পাশে পাহাড়, মাঝে রোমান্টিক পথ। গাড়ি এসে থামল ‘লেক ভিউ’তে। দেখি, অনেক নীচে উপত্যকার মাঝে এক সুন্দর লেক। ক্রমশ পথের উচ্চতা বাড়তে লাগল, সঙ্গে জঙ্গলের ঘনত্ব। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মাঝে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই চিরহরিৎ জঙ্গল। একের পর এক এলাচ প্ল্যান্টেশন, ম-ম করছে চারিদিক এলাচের সুগন্ধে। কিছুটা এগোতেই এবার পর পর দারুচিনি গাছ।
কিছু পরে জঙ্গল একটু ফাঁকা হতেই পথের দু’পাশে চা-বাগান। আর বাগানের মাঝে মাঝে কমলালেবু গাছ– ভারি সুন্দর দৃশ্য! দু’চোখ ভরে দেখছি আর ভাবছি, কী পরম যত্নে ঈশ্বর নিজের দেশকে সাজিয়েছেন! এবার জঙ্গলের মাঝে পর পর কফি প্ল্যান্টেশন। গত তিন ঘন্টা ধরে আমার ক্যামেরা ব্যস্ত রয়েছে। বৃষ্টি আসাতে গাড়ির গতি কমাতে হল। জঙ্গলের ঘনত্ব ধীরে ধীরে হালকা হচ্ছিল। কুমিলি শহরে ঢোকার মুখেই বন্ধ-এর সমর্থকরা আবার আমাদের গাড়ি আটকাল। এবারেও আমাদের জন্য নির্ধারিত শাস্তি, পাঁচ মিনিট গাড়ি থামিয়ে রাখা। অবশেষে বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ আমরা কুমিলিতে পৌঁছলাম।