আলেপ্পি শহর ছাড়াতেই আমাদের ট্রাভেলার ছুটতে শুরু করল। আধঘন্টায় পৌঁছোলাম তুরাভুর। আরুর ছাড়িয়ে কোচি শহরে পৌঁছোতে দুপুর বারোটা। একে একে পেরিয়ে গেলাম তিরুভান্কূলাম্, পুথেন্ক্রুজ, কোলেন্চেরি নামের ছোটো শহরগুলো। এবার শহর ছাড়াতেই সবুজের রাজত্ব শুরু। কোথামন্ডলম্ এবং থালাকোন্ডা পেরিয়ে চলে এলাম জাতীয় সড়ক ৪৯-এ। কিছুক্ষণ পরেই নজরে এল পেরিয়ার নদী। সেতু পার হতেই বাড়তে লাগল পথের উচ্চতা, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাছপালার ঘনত্ব! আমরা চলেছি পশ্চিমঘাট পর্বতমালার চিরহরিৎ অরণ্যের মাঝ দিয়ে। মুন্নার আরও ৬০ কিলোমিটার দূরে। গাড়ি এসে থামল চিয়াপাড়া জলপ্রপাত্-এর সামনে। অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য! প্রায় ৬০ ফুট উঁচু থেকে সাদা, ফেনিল জলধারা ঝাঁপিয়ে পড়ছে নীচে।
ছবি তুলে গাড়িতে এসে বসেছি। কয়েক কিলোমিটার এগোতেই বাঁপাশে এবার স্পাইস্ গার্ডেন। এলাচ, গোলমরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, জায়ফল– কী গাছ নেই সেখানে! হঠাৎ তুমূল বৃষ্টি এল। দু’পাশে জঙ্গল, সামনে পথ দেখা যাচ্ছে না প্রায়। ধীরে ধীরে চলতে লাগল আমাদের গাড়ি। মিনিট ২০ পরে বৃষ্টি থামল। মাইলস্টোনে চোখ রেখে জানলাম, মুন্নার মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে। জঙ্গল হালকা হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। এবার দেখি, চা-বাগানের রাজত্ব সারা পাহাড় জুড়ে। সদ্য বৃষ্টিস্নাত গাছপালা যেন আরও সতেজ! এক প্রাইভেট টি-এস্টেট-এর উলটোদিকে অবস্থিত বিশাল, সুদৃশ্য হোটেল রয়্যাল রিট্রিট-এ এসে থামল আমাদের গাড়ি। নানান ফুল ও অর্কিডে সাজানো এক বাগান হোটেলের সামনেই। বাগানের প্রান্তে পৌঁছে দেখি, নীচে বয়ে যাচ্ছে এক সরু, পাহাড়ি নালা। একেবারে মন কেড়ে নেওয়া পরিবেশ। ঘড়িতে দেখি বিকেল চারটে বেজেছে।
গ্রাউন্ড-ফ্লোর-এ পাশাপাশি ঘর পেয়েছি দুই ফ্যামিলি। ভাড়া বেশি হলেও ঘর পরিষ্কার এবং সুরুচিপূর্ণ আসবাবে সাজানো। বেশ ঠান্ডা মুন্নার-এ, তাই ঘরেই কফি আনালাম। মেঘলা আকাশ, সাড়ে পাঁচটাতেই সন্ধে নেমে এসেছে। আমরা সবাই হাঁটতে বার হলাম। ধীরে ধীরে চলে এলাম সেন্ট্রাল মুন্নার-এ। বাজার, দোকান, এটিএম কাউন্টার নিয়ে বেশ জমজমাট এলাকা। কাছাকাছি বেশ কয়েকটা হোটেল। ফেরার পথে আবার বৃষ্টি নামল। সবাই ঢুকে পড়লাম এক চা-এর দোকানে। মুন্নার নাকি এরকমই, যখন তখন বৃষ্টি। চা পান করতে করতে দেখছিলাম পাহাড়ে সন্ধ্যালগ্নের বৃষ্টিকে। বৃষ্টি থামতেই পথে এসে দেখি, কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে মুন্নার। কোনও দিকেই দৃষ্টি এগোয় না। টর্চ জ্বালিয়ে কোনওমতে ১৫ মিনিট হেঁটে পৌঁছোলাম হোটেলে। রাত সাড়ে ন’টায় পছন্দমতো ডিনার এবং তারপরেই সোজা বিছানায়।