যোশিমঠ থেকে বদ্রিনাথগামী জিপ ছাড়ল বিকেল সোয়া ৩টে নাগাদ। চেনা পাহাড় ও উচ্ছ্বল অলকনন্দাকে পাশে রেখে প্রায়শই ভঙ্গুর পথে বদ্রিনাথ জিপ স্ট্যান্ডে পৌঁছোলাম বিকেল সাড়ে ৪টেয়। লাগেজ পিঠে তুলে মিনিট ৬-৭ হেঁটে চলে এলাম ভারত সেবাশ্রম সংঘের নতুন বাসভবনে। সেখান থেকে বদ্রিনাথ মন্দির প্রায় ঢিল-ছোঁড়া দূরত্বে। আমরা দুই বন্ধু দেখা করলাম আশ্রমের ভারপ্রাপ্ত মহারাজ-এর সঙ্গে। ঘর পেতে অসুবিধে হল না। চারতলা বাসভবনে দোতলার এক ঘরে ঠাঁই হল আমাদের। থাকার ব্যবস্থা প্রায় ভালো হোটেলের সমতুল্য। মেঝেতে কার্পেট পাতা, দুই শয্যা বিশিষ্ট খাটের দুপাশে আয়না সহ কাপ বোর্ড আর বাথরুমে গিজার-এর গরম জল। ঘর প্রতি ভাড়া ৬০০ টাকা।
গরম জলে হাত-মুখ ধুয়ে নীচে নেমে এলাম। এক দোকানে এসে গরম চা খেলাম। এবার চলে এলাম অলকনন্দার দক্ষিণ তীরে অবস্থিত বদ্রিনাথ মন্দিরে। নর ও নারায়ণ পর্বত দুটির মাঝে এই বদ্রিক্ষেত্র। শ্রীক্ষেত্রের উচ্চতা ১০,২২৪ ফুট।
বিকেল সাড়ে ৫টা, প্রচণ্ড ঠান্ডায় মন্দির প্রাঙ্গণে ভিড় নেই। সিংহদ্বার দিয়ে প্রবেশ করে প্রথমে নাট মন্দির, তারপর গর্ভমন্দির। প্রাণ ভরে দর্শন করলাম বদ্রিনাথজিকে। মন্দির প্রদক্ষিণ করে এসে বসলাম আদি গুরু শ্রীশঙ্করাচার্যের শুভ্র মূর্তির পদতলে। সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় প্রভু বদ্রিনাথজির আরতি শুরু হল মহাসমারোহে। কেরালার নাম্বুদিরি বংশোদ্ভূত ব্রাহ্মণ পুরোহিত রাওয়ালজি যখন আরতি করছিলেন, আমি অপলকে দেখছিলাম বদ্রিবিশালজিকে। কালো শালগ্রাম শিলায় নির্মিত ধ্যানমগ্ন চতুর্ভুজ মূর্তি নারায়ণের। দুটি হাত ভগ্ন– শৃঙ্গারের সময় চন্দন দিয়ে হাত দুটি গড়ে নেওয়া হয়। প্রভুর কপালে চন্দন তিলক, গলায় মালা, শরীরে মূল্যবান পোশাক এবং মাথায় সোনার ছাতা। দুই হাতে যোগমুদ্রা। নারায়ণের কপালে হীরকনির্মিত উজ্জ্বল তৃতীয় নেত্র। প্রভুর বাম পাশে নর ও নারায়ণের মূর্তি। ডানপাশে ধনপতি কুবের, গরুড় এবং সিদ্ধিদাতা গণেশ। নারায়ণের সামনে কৃষ্ণসখা উদ্ধব এবং বীণা-সহ দেবর্ষি নারদ। শীতকালে ওই উদ্ধবজির মূর্তিকে নারায়ণের প্রতিনিধি হিসেবে যোশিমঠে নিয়ে গিয়ে পূজা করা হয়।