সূরযকুণ্ডের পোশাকি ঠিকানা ফরিদাবাদ, হরিয়ানা হলেও, এটির অবস্থান বস্তুত ইন্ডিয়া গেট থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে। সত্তর টাকার টিকিট কেটে ঢুকে পড়লে এক রঙিন দুনিয়া যেন চট করে ধরা দেবে আপনার হাতের মুঠোয়। গেট-এর পাশেই মহেশ মূর্তি– এলিফ্যান্টা কেভ-এর আসল মূর্তিটির রেপ্লিকা। মেলা সাজাতে কোথাও রংবিরঙ্গী কৃত্রিম ফুল, কোথাও টেরাকোটা, ডোকরা বা প্লাস্টার অফ প্যারিস ব্যবহার হয়েছে। কোথাও আবার ডালিয়া আর গাঁদাফুলের বাহারি বৈচিত্র্য। ভারতের নানা রাজ্য স্টল সাজিয়েছে নিজেদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিল্পসম্ভারে। পাল্লা দিয়ে সেজেছে আন্তর্জাতিক স্টলগুলিও।
লকডাউনের আগের বছর উপভোগ করেছি এই মেলা। ওই বছর প্রতিবেশী দেশ হিসাবে ছিল শ্রীলংকার স্টল। তারা এনেছিল হ্যান্ডিক্রাফট্-এর চোখধাঁধানো উপচার, বিশেষ প্রজাতির নুআরা এলাইয়া চা আর সুরেলা সংগীতের সম্ভার। স্টলে আরও আছে অবাক হওয়ার উপকরণ। গোল্ড ডাস্ট দিয়ে বোনা ভেলভেটের শিল্পকর্মে উদ্ভাসিত ক্যান্ডির প্রাচীন মন্দির। আছে কাঠের মুখোশ ও পাথরের তৈরি নানা শিল্পকর্ম। মেলায় হাঁটতে হাঁটতে একদল যন্ত্রসংগীত শিল্পীর সঙ্গে দেখা। গলায় ঝোলানো অ্যাকর্ডিয়ান, গিটার, ড্রাম। তাদের ঘিরে ছোটোখাটো ভিড়। শব্দগুলো ভালো বুঝতে না পারলেও মুগ্ধ হয়ে শুনলাম শ্রীলংকার ওই শিল্পীদের সংগীত।
চোখে পড়ল ভুটানের স্টলটা। এঁরা গতবারও এসেছিলেন অপূর্ব থাংকা-র কালেকশন নিয়ে। পাকিস্তান বা নেপালের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেননি এ মেলায়, কিন্তু উগান্ডার স্টলে বেশ ভিড়। ভাঙা ইংরেজিতে উগান্ডার মহিলা বিক্রেতারা গল্প জুড়লেন আমার সঙ্গে, দেখালেন তাদের হস্তশিল্প, গয়না, টোটেম প্রভৃতি।
হঠাৎই একটি পরিচিত হাসি দেখতে পেলাম অন্যপাশের স্টলে। কাবুলের সেই কার্পেট বিক্রেতা। বছর বছর আসেন এই মেলায় অংশ নিতে। বিক্রিবাটাও হয় ভালো। বোখারা কার্পেট-এর সম্ভারে এবারও তিনি সেরা।
বলাই হয়নি, সূরযকুণ্ডের ওপেন থিয়েটারে বহু দেশ-বিদেশের লোকশিল্পীরা অনুষ্ঠান করেন। ওই বছরের থিম স্টেট ছিল গোয়া। তাই স্টেজ সাজানোয় ছিল সূর্য, ওয়াটার সার্ফিং, নারকেল বীথি ও ঝিনুকের ডেকর। সেই বছর হরিয়ানা তাদের গ্রামের একখণ্ড রেপ্লিকা তুলে ধরেছিল মাটির পুতুল সাজিয়ে। গাই-বাছুর-হুঁকো হাতে বৃদ্ধ– সব মিলিয়ে বেশ বিশ্বাসযোগ্য দৃশ্যায়ন। এই রেপ্লিকা কুঁড়েঘরগুলোই স্টেজ আর্টিস্টদের সাজঘর। দলে দলে শিল্পীরা আসছেন আর দিনভর তাদের নৃত্যকলা প্রদর্শন করে যাচ্ছেন মঞ্চে।