গ্রন্থসাহেবে উল্লেখ আছে দশম গুরু গোবিন্দ সিংজি পূর্বজন্মে মেধস মুনি নামে এক সরোবরের তীরে তপস্যা করেন এবং দৈবাদেশ পান খালিসা ধর্ম প্রচারের। গাড়োয়াল হিমালয়ের বরফাবৃত সপ্তশৃঙ্গে ঘেরা নীল-সবুজ জলের সেই সরোবরই নাকি হেমকুণ্ড। হেমকুণ্ডসাহিব তাই শিখ ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র তীর্থস্থান। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে শিখ পুণ্যার্থীরা এখানে আসেন, পুণ্যস্নান করেন। আর আসেন উৎসাহী ট্রেকার্স। যদিও তাদের সংখ্যা হাতেগোনা। পাশেই বদ্রিনারায়ণ বা বদ্রিনাথে, বছরে যে-পরিমাণ পর্যটক আসেন, তার এক শতাংশ পর্যটকও এখানে আসেন না। এর অন্যতম কারণ হয়তো যাতায়াতের দুর্গমতা। প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ যেতে হবে পায়ে হেঁটে কিংবা ঘোড়ায় চেপে। তবু গরমের ছুটিটাকে আমরা বেছে নিয়েছিলাম হেমকুণ্ড ভ্রমণের জন্য।
হাওড়া থেকে উপাসনা এক্সপ্রেসে চেপে পরদিন সাড়ে চারটে নাগাদ হরিদ্বার পৌঁছই। সেদিনই সন্ধ্যার আগে ২৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে হূষীকেশ পৌঁছে যাই রাত্রিবাসের জন্যে। কারণ হূষীকেশ থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। হরিদ্বারের তুলনায় অনেক বেশি বাস ছাড়ে বদ্রিনাথগামী। যদিও বাস নয়, আমরা একটা সুমো জাতীয় গাড়ি রিজার্ভ করি। নিজেদের গাড়ি থাকলে সুবিধা বেশি পাওয়া যাবে। পথে পড়বে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান, বিশেষ করে পঞ্চপ্রয়াগের পাঁচটি প্রয়াগ, সেগুলিও দেখে নিতে চাই এই যাত্রায়।
পরদিন সকাল আটটা নাগাদ গাড়ি ছাড়ল হৃষীকেশ থেকে। যাব গোবিন্দঘাট, ২৭১ কিলোমিটার রাস্তা। একটানা ৬৯ কিলোমিটার চলার পর প্রথম গাড়ি থামল দেবপ্রয়াগে। এলাহাবাদের সঙ্গমের পরেই দেবপ্রয়াগের স্থান। মন্দাকিনী ও অলকানন্দার মিলিত সলিলে গোমুখ থেকে আসা ভাগীরথীর মিলন ঘটেছে এখানে। দুটি নদীর ধারা সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই রঙের, একটি সাদা অন্যটি পান্নাসবুজ। গঙ্গা নামের উৎপত্তি এই দেবপ্রয়াগ থেকেই। কথিত আছে, রাজা দশরথ দেবপ্রয়াগেই অজক মুনির পুত্রকে শব্দভেদী বাণে বিদ্ধ করেছিলেন। রাবণ বধের পরে শ্রীরামচন্দ্র পাপস্খালনের জন্য তপস্যা করেন এখানে, এমনকী দেবপ্রয়াগেই আছে ভগবান বিষ্ণুর নাভি। দেবপ্রয়াগ দর্শন শেষ করে আবার গাড়িতে চাপি। পরবর্তী গন্তব্য রুদ্রপ্রয়াগ।