বাটা শু কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বিখ্যাত থমাস বাটা-র পুত্রবধূ সোনিয়া বাটা ১৯৯৫ সালে এই মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠা করেন। এটাই পৃথিবীর সব থেকে বড়ো শু মিউজিয়াম। একসময় স্থাপত্য শিল্পের ছাত্রী সোনিয়া বিয়ের পর স্থাপত্য শিল্প ছেড়ে জুতো সংগ্রহ এবং তাদের ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। সোনিয়ার নিজের সংগ্রহে তেরো হাজারেরও বেশি জুতো ছিল। এর অধিকাংশই যদিও রোজকার জীবনে ব্যবহার করার মতো নয়। কয়েক শো বছরের পুরোনো জুতো যেমন আছে এই মিউজিয়ামে, তেমনি এলটন জন-এর সেই বিখ্যাত সিল্ভার বুটও এখানের প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। ২০১৮ সালে সোনিয়া বাটা মারা গেলেও তাঁর তৈরি এই মিউজিয়াম ভবিষ্যতেও আমার মতো হয়তো অনেক জুতোপ্রেমীর মনোরঞ্জন করবে।
এর পর গেলাম ‘কাসা লোমা”, স্প্যানিশ ভাষায় যার অর্থ হল পাহাড়ের উপর বাড়ি। সমুদ্র থেকে প্রায় ১৪০ মিটার আর ওন্টারিও হ্রদের থেকে প্রায় ৬৬ মিটার উপরে অবস্থিত বলেই হয়তো দুর্গটির এরকম নামকরণ হয়েছিল। হেনরি পেলাট নামে একজন ব্যবসায়ী প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার খরচ করে ১৯১৪ সালে দুর্গটি বানান। ইউরোপ থেকে নিয়ে আসা ৩০০ শ্রমিকের তিন বছরের নিরলস শ্রমের ফল এই দুর্গ। যদিও বাড়িটির কাজ তখনও সম্পূর্ণ হয়নি। ৯৮টি ঘর নিয়ে তৈরি এই দুর্গটি হেনরি পেলাট সপরিবারে থাকার জন্য তৈরি করেছিলেন। এটা কানাডার সব থেকে বড়ো ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বাড়ির মধ্যে পড়ে।
হেনরি পেলাট এক সময় সেনা বাহিনীতে চাকরি করতেন, তাই এই দুর্গের পরিকল্পনায় তার নিদর্শন পাওয়া যায়। এই দুর্গের ভেতরে সুড়ঙ্গপথ আর যুদ্ধ-প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র যেমন রয়েছে, তেমনি আবার অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য পাইপ অর্গান, সুইমিং পুল, বোলিং খেলার জায়গা-সহ আরও অনেক আমোদের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হেনরি পেলাট এই রাজকীয় দুর্গ বেশিদিন ভোগ করতে পারেননি।
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর তাঁর আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ১৯২৩ সালে বাড়িটি নিলামে বিক্রি হয়। তারপর অনেক হাত ঘুরে এখন বাড়িটি ‘দ্য সিটি অফ টরোন্টো'র মালিকানায় আছে। টুরিস্টদের সাথে সাথে এই দুর্গটি সিনেমা, টেলিভিশন এবং অন্যান্য ফটো শুটিংয়ের জন্যও ব্যবহার করা হয়। হলিউডের অনেক বিখ্যাত ছবি এই কাসা লোমা দুর্গকে পৃথিবীর দর্শকের সামনে তুলে ধরেছে। শিকাগো, আমেরিকান মিউজিকাল কমেডি ক্রাইম ফিল্ম, এরকমই একটা ছবি।