জার্মান সুরকার বাখ-এর অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে ইয়ো ইয়ো মা নদীর ধারের ঢেউ খেলানো ল্যান্ড স্কেপের জন্য এই পার্কের ডিজাইন তৈরি করেছিলেন। এই পার্কটি যদিও আমেরিকার বস্টনে তৈরি হবার কথা ছিল। কিন্তু কোনও কারণবশত সেটা না হওয়ায়, টরোন্টোর মেয়র বার্বরা হলের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত টরোন্টোতেই এই মিউজিক পার্ক তৈরি হয়।
পুরো পার্কটিকে ছয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সর্ব শেষে আছে ঘাস বিছানো সিঁড়ি, যার শেষ হয়েছে একটা মুক্ত মঞ্চে। কানাডার গ্রীষ্মকালে, সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এখানে অনেক রকমের সঙ্গীতের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। আমরা কিছুক্ষণ একজন কানাডিয়ান গায়কের গান শুনে ওয়াটার ফ্রন্ট ট্রেইল দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কাছেই একটা রেস্তোরাঁতে ডিনার করে হোটেলে ফিরলাম।
পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট করে রওনা দিলাম টরোন্টো জু-র উদ্দেশ্যে। প্রায় আধ ঘণ্টা লাগল পৌঁছোতে। এখানে এসে প্রথমেই একটা মজার ব্যাপার চোখে পড়ল। এখানে গাড়ি পার্ক করার কোনও প্রয়োজন নেই। গাড়ি নিয়েই সবাই চিড়িয়াখানার ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। ৭১০ একর জায়গা নিয়ে এই চিড়িয়াখানা তৈরি করা হয়েছে। এটাই কানাডার সব থেকে বড়ো চিড়িয়াখানা। এই চিড়িয়াখানাকে সাতটি ভৌগোলিক সীমারেখার ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে। তার মধ্যে আছে আফ্রিকা, আমেরিকা, অস্ট্রেলেশিয়া, কানাডা, ইউরেশিয়া, ইন্দো-মালয় আর তুন্দ্রা।
চিড়িয়াখানার ভেতরে রয়েছে প্রায় দশ কিলোমিটার হাঁটা পথ। একদিনে সম্পূর্ণ চিড়িয়াখানা হেঁটে দেখা সম্ভব নয়। তাই গাড়ি নিয়ে গেলে সহজেই সব জায়গাগুলো ঘুরে দেখা যায়। এই চিড়িয়াখানা তৈরি হয়েছিল মানুষ আর পশুদের মধ্যে একটা মেল বন্ধন তৈরি করার জন্য। আমরা হয়তো অনেকেই জানি পৃথিবীতে অনেক পশু ইতিমধ্যেই অবলুপ্ত, আর কিছু বিলুপ্তির পথে। এই চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যথাযথ সংরক্ষণের মাধ্যমে বিপন্ন পশুদের অবলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে। এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত পাঁচ হাজারের উপর পশু রয়েছে।
ছোটো বাচ্চাদের মধ্যে এই চিড়িয়াখানা খুবই জনপ্রিয়। সময় কোথা দিয়ে কেটে যাবে বোঝার আগেই বিকেল হয়ে যাবে। চিড়িয়াখানার ভেতরে বিশ্রাম নেবার জন্য আবার ছোটো ছোটো পার্ক রয়েছে। আমরা বাইরে থেকে খাবার নিয়ে যাইনি বলে চিড়িয়াখানার ভেতরেই রেস্তোরাঁতে লাঞ্চ করে আরও কিছুটা সময় কাটিয়ে বেরিয়ে এলাম।