আমাদের এর পরের গন্তব্যস্থল ছিল ডিসটেলারি ডিস্ট্রিক্ট। প্রায় বিকেল হয়ে এসেছে। ডিসটেলারি ডিস্ট্রিক্ট-কে টরোন্টোর শিল্প, সংস্কৃতি ও বিনোদনের সার্থক ঠিকানা বলা যেতে পারে। এখানে এসে প্রথম চোখে পড়ল ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপিয়ান স্থাপত্যকলা। রাস্তার দু'পাশে সারি সারি ইমারতগুলো এক সময় হুইসকি বানানোর কারখানা হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। এখান থেকে সারা পৃথিবীতে হুইসকি রফতানি করা হতো। তবে এখন এটাকে টুরিস্টদের প্রিয় সান্ধ্য বিনোদনের জায়গা বলা যেতে পারে। এখানে বিকেলের পর থেকে রোজ কিছু না কিছু লেগেই থাকে।
টুরিস্টদের বিনোদনের জন্য অনেক রাত পর্যন্ত এখানে নাচ, গান, নাটক— এসব চলতেই থাকে। আশেপাশে বিভিন্ন রকমের ও বিভিন্ন বাজেটের পানীয়ের দোকান আর রেস্তোরাঁ রয়েছে। এখানে টুরিস্টরা বিভিন্ন দোকান ঘুরে ঘুরে অ্যালকোহল টেস্ট করে। তবে আরেকটি বিশেষত্ব হল এখানে গাড়ি নিয়ে ঢোকা যায় না। সম্পূর্ণ জায়গাটাই পদযাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত। এখানে ডিনার করে তারপর কিছু অনুষ্ঠান দেখে হোটেলে ফিরতে রাত ন'টা বেজে গেল।
আজ টরোন্টোতে আমাদের তৃতীয় দিন। আগে থেকেই অনেক কিছু পরিকল্পনা করা আছে। জানি না তার কতটুকু শেষপর্যন্ত ঘুরে দেখতে পারব। সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট করে সারাদিনের জন্য তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আজ আমাদের গন্তব্য স্থল নায়াগ্রা ফল্স। তবে তার আগে আরও অনেক জায়গায় যাবার পরিকল্পনা আছে। হোটেল থেকে বেরিয়ে কুইন এলিজাবেথ ওয়ে ধরে ১৩০ কিলোমিটার পথ ড্রাইভ করে পৌঁছোলাম মিসিসউগা বিচে। ১৩০ কিলোমিটার পথ আসতে দের ঘন্টারও কম সময় লাগল।
জায়গাটার নাম ‘নায়াগ্রা অন দ্য লেক'। এই সেই জায়গা, যেখানে বিখ্যাত নায়াগ্রা নদী এসে ওন্টারিও হ্রদে মিশেছে। এই নায়াগ্রা নদীর এক দিকে কানাডা, অন্য দিকে আমেরিকা। গাড়ি পার্ক করে একটু হেঁটে বিচের পথে যেতেই চোখে পড়ল মিসিসউগা ফোর্ট। ওন্টারিও হ্রদের ধারে এই ফোর্টের ইতিহাস অনেক পুরোনো। ব্রিটিশ উপনিবেশ গড়ে তোলার আগে এখানে কানাডার আদিবাসীরা বাস করত। ১৮০৪ সালে মিসিসউগা পয়েন্টে প্রথম লাইট হাউজ তৈরি হয়। কিন্তু ১৮১৩ সালে ব্রিটিশ এই অঞ্চল দখল করে নেয়। আর তারপর থেকেই শুরু হয় অন্য এক ইতিহাস।