টরোন্টো থেকে নায়াগ্রা ফল্স যাবার পথে আঙুরের বাগান আর ওয়াইনারি না দেখলে যে বেড়ানোটা অনেকটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, তাই কিছুটা সময় বের করে চলে গেলাম পিলিটেরি এস্টেট ওয়াইনারিতে। মিসিসউগা ফোর্ট থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরেই এই ওয়াইনারি। এখানে অনেক টুরিস্ট আসে ওয়াইন টেস্টি-এর জন্য। আমরা এখানে ওয়াইন টেস্টিং-এর সাথে সাথে লাঞ্চও করে নিলাম। এখানেই প্রথম স্বাদ নিয়েছিলাম কানাডার বিখ্যাত আইসড ওয়াইনের। কানাডাতেই সব থেকে বেশি আইসড ওয়াইন তৈরি হয়। শীতের শুরুতে যখন প্রথম বরফ পড়তে শুরু করে, তখন আঙুর গাছের আঙুরগুলো বরফে জমে যায়। আর সেই আঙুর দিয়েই তৈরি হয় পৃথিবী বিখ্যাত আইসড ওয়াইন।
পিলিটেরি এস্টেট ওয়াইনারি থেকে গাইডেড টুর-এরও ব্যবস্থা আছে। ৪৫ মিনিটের টুর-এ কীভাবে ওয়াইন বানানো হয়, কোথা থেকে আঙুর আসে, সব দেখানো হয়। তাছাড়াও টুরিস্টদের ওয়াইন টেস্ট করতে দেওয়া হয়। এই টুর-এ খরচ হয় ২৫ কানাডিয়ান ডলার। একটা অন্য রকমের অভিজ্ঞতা নিয়ে পিলিটেরি এস্টেট ওয়াইনারিকে বিদায় জানিয়ে এবার যাত্রা শুরু করলাম আমাদের আজকের শেষ গন্তব্য স্থল, নায়াগ্রা ফল্স-এর দিকে।
পিলিটেরি এস্টেট ওয়াইনারি থেকে আধ ঘন্টার দূরত্বে পৃথিবী বিখ্যাত নায়াগ্রা ফল্স। আমি ইচ্ছে করেই নায়াগ্রা জলপ্রপাতে আসার পরিকল্পনাটা একটু বিকেলের দিকে করেছিলাম। গাইডেড টুর কোম্পানিগুলো সাধারণত সকালে বেরিয়ে দুপুর বা বিকেলের মধ্যে টুরিস্টদের টরোন্টো-তে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু নায়াগ্রা ফলসে শুক্রবার রাতে যে আলো আর আতশবাজির খেলা হয়, সেটা আমি কিছুতেই মিস করতে চাইনি। বিকেল চারটে নাগাদ পৌঁছোলাম নায়াগ্রা ফলসে। তখনও চারিদিকে বেশ ভিড়। গাড়ি পার্ক করে উপরে উঠে গেলাম সেই পরমা সুন্দরীর দর্শন লাভের আশায়, যে কিনা ১২০০০ বছর ধরে স্ব-মহিমায় বিরাজমান। প্রথমেই চোখে পড়ল সুদূর বিস্তৃত কুয়াশা। আর কানে এসে বিধল সেই বজ্রধ্বনি। পড়ন্ত বেলায় সূর্যের সোনালি আভায় সেজে উঠেছে এই জলপরি।