নৈনিতালে গিয়ে সকলেই থাকেন, ফলে ‘সিজনে’ নৈনি হ্রদের আশপাশ প্রায় কলকাতার দুর্গাপুজোর মতোই জমজমাট হয়ে যায়। আমরা তাই ঠিক করেছিলাম নৈনিতালের বদলে ভীমতালে গিয়ে থাকব। নৈঃশব্দ আর সবুজ ছায়া ঘেরা ভীমতাল, স্নিগ্ধ হ্রদটির লাবণ্য নিয়ে অপেক্ষায় ছিল আমাদের স্বাগত জানাতে।
ছবি তোলা, খাওয়া আর ঘুম। আ্য়াজেন্ডা বলতে এইটুকুই। কারণ শহুরে জীবনযাপনের একঘেয়ে ক্লান্তি, ভাইরাসের আতঙ্কে নিত্য়দিন আতঙ্কে কাটানো-- এসব থেকে খানিকটা মুক্তিই খুঁজছিলাম আমরা। তাই অযথা আইটিনিরেরারি -কে অকারণ ভারাক্রান্ত করিনি। এই যাত্রায় কোথাও ছুটে বেড়ানোর কোনও তাড়াও নেই।
প্রকৃতির কোলে রিজুভিনেশনের এমন জায়গা আর হয় না।প্ল্যান মোতাবেক তাই ভীমতালের অভ্যন্তরে একটি ছোট্ট গ্রাম জঙ্গলিয়াগাঁও-তে হোমস্টে-র ব্যবস্থা হল। এমারেল্ড ট্রেইল কটেজ আমাদের সেই অবসর যাপনের ঠাঁই। বস্তুত এটি একটি ফার্মহাউস। প্রচুর ফাঁকা জায়গা, সবজি বাগান, গোশালা নিয়ে এটির কমপাউন্ড এরিয়া।
নৈনিতাল থেকে গাড়িতে পেৌঁছে গেলাম সকালের রোদ গায়ে মেখে। সোলার প্যানেলে এখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থা। শান্তিতে দিনতিনেক কাটানোর একেবারে আদর্শ আবাস।
দুপুরে সুস্বাদু লাঞ্চ সেরে বাকি সময়টা আলসেমি করেই কাটিয়ে দেওয়া গেল। বাঁধাকপির ছোট্ট খেত, নানারকম ফুলের কেয়ারি ঘুরে। একটি ছিমছাম দিশি দোলনায় বসে প্রকৃতির কোলে গা ভাসিয়ে দেওয়ার এ সুযোগ ছাড়া যায় না। নানা রকম পাখির ডাকে বিকেল গড়াল সন্ধ্যায়। কম্পাউন্ড-এ ছোট্ট একটা আগুন করে, গোল হয়ে বসে বেশ রাত অবধি চলল আমাদের আড্ডা। রাতের তারারা সলমা চুমকির ওড়না বিছিয়ে দিল আকাশ জুড়ে।নক্ষত্র চেনার খেলায় কেটে গেল সময়।
ভোরে পাখির ডাককে সঙ্গী করে হাঁটতে বেরোলাম পাইন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে। শুকনো পাতার মর্মরধবনি তুলে হাঁটতে হাঁটতে ফুসফুস ভরে নিলাম টাটকা অক্সিজেন। পায়ে পায়েই পথ তৈরি হয়ে গেছে পর্ণমোচি জঙ্গলে। দুচার ঘর জনবসতি পেরিয়ে, পাইন আর সিলভার ওক-এ ঘেরা জঙ্গুলে ভ্রমণ, আমাদের মতো শহুরেদের কাছে সত্যিই বোনাস।
জঙ্গলে বসেই প্রাতরাশ সেরে, দুপুর নাগাদ ফিরে এলাম কটেজে। দুপুরের খাবার খেয়ে উঠতে উঠতেই মেঘ জমে বৃষ্টি এল ঝেঁপে। রাতে বেশ ঠান্ডা পড়বে, সতর্কতা জানাল কেয়ারটেকার।