মধ্যাহ্নে রেস্তোরাঁর দোতলায় বসে চিকেন ড্রাই-ফ্রাই-এর স্বাদ আস্বাদন করতে করতে সুন্দরী তিস্তাকে দেখার অভিজ্ঞতা আগে ছিল না। এই সুযোগ করে দিল আমাদের সফরপথের গাড়িচালক স্যামুয়েল লেপচা। বেলা বারোটায় বাগডোগরা বিমানবন্দরের বাইরে এসে গাড়িতে উঠে খিদে পাওয়ার কথা জানাতেই, সেবক রোড-এ অবস্থিত ‘অভিনয়’ রেস্তোরাঁয় খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল স্যামুয়েল। তাই, পথে চা-পান করলেও, ভালো খাবারের জন্য একটু অপেক্ষা করতেই হল।
পাহাড়ি জল পেটে সহ্য নাও হতে পারে, এই ভেবে নামি ব্র্যান্ডের কয়েকটা পাঁচ লিটারের জলের জার কিনে গাড়িতে তুললাম। তারপর চললাম পূর্ব সিকিমে আমাদের প্রথম গন্তব্য ইয়াকতেন-এর উদ্দেশে।
তিস্তার ফিগার এখন স্লিম। কারণ, শীতে তার জলভার কমে গেছে। এহেন বহমান তিস্তাকে পাশে রেখে ছুটে চলল আমাদের গাড়ি। তিস্তা বাজার, লাভার্স পয়েন্ট ছাড়িয়ে গ্যাংটকগামী পথে কিছুটা চলার পর তিস্তাকে আর পাশে পাওয়া গেল না, রানিপুল থেকে গাড়ি ঢুকল অন্য পথে।
সিকিমের অন্য পর্যটন পথের মতো এ পথে (ইয়াকতেন-এর) গাড়ির ততটা চাপ নেই। তাই সর্পিল পাহাড়ি পথের ডানদিকে পাহাড় আর বাম দিকে শাল-সেগুন প্রভৃতি বৃহৎ বৃক্ষের ঘন জঙ্গল ভেদ করে যখন আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে, তখন নির্জনতার এক অদ্ভূত রোমাঞ্চ অনুভূত হচ্ছিল। এভাবেই ১০৮ কিলোমিটার পথে (রানিপুল থেকে) দুপুর-বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামল সফর পথে।
সন্ধে সাতটা। গাড়ি থামালাম পাখিয়ং বাজারে। পূর্ব সিকিমের পর্যটনকে যাঁরা আরও উন্নত করতে চান, সেই দুই প্রধান উদ্যোক্তা নারায়ণ প্রধান এবং হূষিকেশ গুরুং-এর আমন্ত্রণে কিছুক্ষণের জন্য গেলাম ‘অ্যালপাইন হোম স্টে’-তে চা-পান করতে। প্রায় ১০৪ বছরের প্রাচীন বাড়িটিকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে এখানে। জমিদার আমলের আসবাব আর গৃহস্থালিতে সমৃদ্ধ এই হোম স্টে, সত্যিই মন কেড়ে নিল, কিন্তু থাকা হল না সফর তালিকায় না থাকার জন্য। তবে জেনে নিলাম, এখানে মোট কুড়িজন একসঙ্গে থাকতে পারবেন। থাকা-খাওয়া বাবদ প্রতিদিন মাথাপিছু খরচ করতে হবে ৮00 টাকা।