অক্টোবর-এর শেষ। পুজোর ঠিক পরে– তখনও উত্তরে হাওয়ার গতি পায়নি কিন্তু গরমের তেজও নেই, রয়েছে শীতের মৃদুমন্দ আমেজ। এই আবহাওয়াকে সঙ্গী করে আমরা সাতকোশিয়া জঙ্গলের যাত্রী। সাতকোশিয়া দর্শনের আগে ভিতরকণিকার জলে-জঙ্গলে তিনটে দিন কাটিয়েছি, তারপরই পরিকল্পনা এই সাতকোশিয়া ভ্রমণের। চাঁদবালি থেকে চলে এসেছি সম্বলপুরগামী ৪২ নং জাতীয় সড়কের মোড়ে। এখানেই হবে গাড়ি বদল– সাতকোশিয়াতেও তিন দিনের প্যাকেজ Travelogue - Satkoshia।
মহানদীর উৎস মধ্যপ্রদেশ বর্তমানে ছত্তিশগড়ের রায়পুর জেলার ফরসিয়া অঞ্চল। সেই নদী ৯০০ কিমি পথ অতিক্রম করে পৌঁছেছে ওড়িষার টিকরপাড়ায়। মহানদীর দুপাশে পাহাড়, জঙ্গল, বালুচর– এই নিয়েই সাতকোশিয়া। দুপাশে পাহাড়ের বুক চিরে প্রবাহিত হয়েছে বলে সৃষ্টি হয়েছে গর্জ। আর এই গর্জ তথা গিরিখাতের সীমানা ৭ ক্রোশ তথা ১৪ মাইল (২২ কিমি)। তাই নাম সাতকোশিয়া গর্জ।
ভারতের বৃহত্তম এই গর্জকে ঘিরে বনাঞ্চল সাতকোশিয়া গর্জ, অভয়ারণ্য হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০০৭ সালে এই অভয়ারণ্য ওড়িশার দ্বিতীয় টাইগার রিজার্ভ হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। কটক, অঙ্গুল, নয়াগড়, বৌধ এই চার জেলা নিয়ে সাতকোশিয়া গর্জ অভয়ারণ্যের বিস্তার। তবে এই অঞ্চলে মহানদীর গতিপথ সৃষ্টি করেছে দুটি আলাদা অরণ্য ডিভিশন। নদীর এক পাশে নয়াগড় ও বৌধ জেলা নিয়ে মহানদী ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশন, আর অঙ্গুল ও কটক জেলা নিয়ে সাতকোশিয়া ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশন।
ইতিমধ্যে গাড়ি বদল হয়ে গেছে। ৪২ নং জাতীয় সড়ক ধরে আমরা এগিয়ে চলেছি।
দু-দুটো গাড়িতে যাত্রীর সংখ্যা মোট বারো। আস্তে আস্তে লোকালয় ফিকে হতে লাগল, দৃশ্যপটের অনেকটা জায়গা দখল করে নিল প্রকৃতি। পৌঁছে গেলাম ঢেঙ্কানল। প্রকৃতির মধ্যেই মাঝারি গোছের শহর। ফাঁকা পতিত জমি, সবুজ মাঠ, গাছের সারি, দূরে ছোটো ছোটো টিলা– তারই মাঝ দিয়ে মসৃণ পিচের রাস্তা। যেন সবুজ শাড়ির মধ্যে দিয়ে একটা কালো পাড় চলে গেছে। ধীরে ধীরে অঙ্গুল শহরের দিকে এগিয়ে চলেছি। রাস্তায় ট্রাফিকের চাপ একটু একটু করে বাড়ছে। তার প্রধান কারণ বোধহয় অঙ্গুল শহরে ঢোকার আগে রাষ্টায়ত্ত্ব সংস্থা ন্যালকোর কর্মযজ্ঞ। ন্যালকো একটি বিরাট ফ্যাক্টরি– তার গেটে জ্যামে আটকে রইল গাড়ি প্রায় মিনিট দশেক। অঙ্গুলেই রয়েছে ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিস। টিকরপাড়া, পুরাণকোট, লবঙ্গী জঙ্গলের বনবাংলো থাকার ব্যবস্থা হয় এই অঙ্গুল থেকেই। টিকরপাড়া নেচার ক্যাম্প চালু হয়নি, টিকরপাড়া বনবাংলো কোনও কারণে বন্ধ আছে তাই ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় (রাজু চৌহান কৃত) আমরা জঙ্গলের বাইরে থেকেই এবার অরণ্য পরিভ্রমণ করব।