গাড়িটার দুরন্ত গতি হঠাৎই শ্লথ হল। রাস্তাজুড়ে তা-ধিন-ধিনা বেতাল নৃত্য। খেয়াল করলাম, গাড়ির ভিতর আমার শরীরখানা আমার বশে নেই। নৃত্যরত পথের নেশায় সেও বেয়াড়া নাচের তালবেতালে টালমাটাল। সামনের নদী টপকানো সেতুর বুকে চাকা গড়াতেই খানিক স্বস্তি। তখন মেঘের কপাট হাট করে প্রকৃতির আঙিনা ভরে উঠেছে কনে দেখা গোধূলির লাজুক-রাঙা আলোয়। সেই আলোতেই ওকে প্রথম দেখা। ‘নরম দদাতি ইতি’ নর্মদা। মজা-নদীর অল্প জলে বিকেল-আলোর কল্পমায়া। পুরাণকথায়, শিবের মানসপুত্রী নর্মদার জন্ম এই শিবভূমি অমরকণ্টকেই। মেখল পাহাড়ের কোলে নিসর্গ আর ধর্মের সমাহারে অমরকণ্টক হিন্দুদের কাছে এক পুণ্যতীর্থও বটে।

হোটেল আগে থেকেই বুক করা ছিল। ক্লান্তিহরণ বিছানাটাও তৈরি ছিল আমার জন্য। আজ আর বেরব না। কেবল হোটেল মালিকের সাহায্যে কালকের ভ্রমণের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা পাকা করে নিলাম।

প্রকৃতি তখনও অন্ধকারের ওড়নায় ঘুমাচ্ছন্ন। আমার গাড়ি ছুটল সোনমুড়ার দিকে। অমরকণ্টক থেকে দেড় কিলোমিটার। মধ্যপ্রদেশের আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন। তাই রাতে আর ভোরে বেশ ঠান্ডা লাগে। গাড়ি-জানলার বন্ধ কাচে চোখ পেতে দেখি অল্প অল্প করে ঊষার গল্প শুরু। অজস্র বীরপুংগবদের উৎপাত উপেক্ষা করে গাড়ি থামল সোনমুড়ায়। সূর্যোদয় দেখার আদর্শ স্থান। পুবের আকাশ ফরসা হল কিছুটা। পিচরাস্তা ছেড়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলাম সানরাইজ পয়েন্টে। দূরের দিগন্তে তখনও পৌঁছোয়নি পাখির ডাক। গাছের পাতাগুলো সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু-আলো গায়ে মেখে সবেমাত্র হাই তুলছে। একটি-দুটি লোক সমাগমে ভরে উঠছে সানরাইজ গ্যালারি। সময় এল। জবাপুষ্পের মতো লোহিতবর্ণে সেজে সূর্য উঠল। নীল কপালের মাঝখানটিতে মঙ্গলটিপ এঁকে যেন ভৈরব-যোগী ভোর সামনে এসে দাঁড়াল।

সানরাইজ পয়েন্টটা অতল খাদের বুকে ঝুলন্ত বারান্দার মতো। বাটির মতো পৃথিবীটার বুক সেজেছে সবুজ-ঘন সবুজের রং-বিসারী খেলায়। যত দূরে গেছে, সবুজ ততই নীলচে হয়ে কুয়াশায় মিলিয়েছে। সোনমুড়ায় শুধু সূর্যোদয় নয়, গল্প আছে আরও। সানরাইজ গ্যালারি যাবার পথে ডানহাতে বজরংবলীর বিরাট মূর্তি। তাকে ফেলে এক কুণ্ড। অবিরত জল এসে জমা হচ্ছে সেখানে। অদ্ভুত ব্যাপার! কেউ জানে না সেই জলের উৎস কোথায়? এটাই সোন নদের উৎস। জনশ্রুতি, ব্রহ্মার চোখের জল থেকে এর উৎপত্তি। এখানকার শিবলিঙ্গটিও স্বয়ম্ভু অর্থাৎ আপনা-আপনিই মাটি ফুঁড়ে আবির্ভাব হয়েছে। পাশেই উঠে যাওয়া সিঁড়ি টপকে দুর্গামাতার মন্দির। সাজগোজ-অলংকারে বৈষ্ণোদেবীর মতো। সকালের আরতি সমাপন। চোখ জুড়োল। মন্দিরের পাশে পর্ণকুটিরে এক সাধু ও তার সাধনসঙ্গিনী আপন মনে গান গেয়ে চলে দিবানিশি। ওদের, সংগীতেই মুক্তি ও সংগীতেই শান্তি।

आगे की कहानी पढ़ने के लिए सब्सक्राइब करें

ডিজিটাল

(1 साल)
USD10
 
সাবস্ক্রাইব করুন

ডিজিটাল + 12 প্রিন্ট ম্যাগাজিন

(1 साल)
USD79
 
সাবস্ক্রাইব করুন
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...