এসেছি এক মেঘ-বৃষ্টি-পাহাড়ের দেশে। উঠেছি রাজধানী শহর শিলং-এ। মনে তো প্রশ্ন জাগবেই। সব ছেড়ে কেন বাবা মেঘালয়ে? আসলে, বৃষ্টি তো কলকাতার ফ্ল্যাটে বসেও দেখা যায়। কিন্তু মেঘের দেশে গিয়ে মেঘ-বৃষ্টির খেলা স্বচক্ষে দেখা– না ভাবাই যায় না। মজার ব্যাপার অঙ্কটা যাচ্ছে মিলেও। মেঘবালিকাদের মুখোমুখি হচ্ছি প্রতিদিনই। এই ক’দিনে মগজস্থ হয়েছে এ তল্লাটের ম্যাপটাও। তবে প্রকৃতিরূপের পাঠ নিচ্ছি একজনের হাত ধরে। তিনি আর কেউ নন, ৪২ বছরের অভিজ্ঞ এক বাঙালি ড্রাইভার। নাম পরেশ মোদক। শিলং-এরই বাসিন্দা। আসলে এই ক’দিনে তিনি আপনজনের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন, ভালোভাবে।
আজও শুরুর সকাল মেঘে ঢাকা। সময় মতো হাজির পরেশদা, তার বাহন নিয়ে। ‘আজ যাব ভূগোলের প্র্যাকটিক্যাল করাতে’– সদা হাস্যময় মুখে পরেশদার স্বঘোষিত উক্তি। তার মানে আজ মৌসিনরামের দিকে। পৃথিবীর সর্বাধিক বর্ষণপ্রবণ অঞ্চল। ভূগোলে পড়া সেই নামটাকে দেখব স্বচক্ষে। তার সাথে উপরি পাওনা বৃষ্টি। সত্যি, ছাত্রাবস্থায় যদি কেউ আনত– এই মেঘ-বৃষ্টির দেশে! মনকে বোঝালাম, তাতে কি হয়েছে, আজ তো যাচ্ছি। আসলে, চেরাপুঞ্জির মতো অত জনপ্রিয় নয়– এই মৌসিনরাম টুর। ফলে বেশিরভাগ টুরিস্টই এড়িয়ে চলেন এই পথ। আমার আবার অফ্-বিটই বেশি পছন্দ।
রাস্তা জ্যামের ঝক্বি নেই সাতসকালে। শহর সীমানায় পড়ল বায়ুসেনা ব্যারাক। এরপরই হাইরোড ছেড়ে শাখা রাস্তায়। বাঁদিকের এই শাখাপথ চেরাপুঞ্জি পথের মতো প্রশস্ত নয় তেমন। বিপরীত দিক থেকে চলে আসা গাড়িকে সাইড দিতে হচ্ছে তাই কায়দা করে। পরেশদা বললেন, এই তল্লাটের বিধায়ক তেমন তৎপর নন। মেঘালয়ে যেখানে অনেক ছোটো ছোটো স্থানেও রাস্তাঘাট ঝাঁ-চকচকে, সেখানে এই রুটের পথচিত্রের পরিবর্তন হয়নি এখনও। সামনের উপত্যকায় দেখি উপজাতি মানুষজনের ঘনবসতি। সবুজ বৃক্ষশৃঙ্খল পথ জুড়ে। যাত্রাপথে পরেশদা চেনালেন নাশপাতি, পিচ, আলুবোখরার মতো গাছ। সারি সারি গাছে ফলও ধরেছে অজস্র। চোখ আটকাচ্ছে রংবাহারি ফুলের প্রকৃতিজাত এক্সজিবিশনে। বিশেষত গোলাপ ও জবার যৌবন উপচে পড়ছে। সেই সঙ্গে স্কুলের পথে চলা খাসিয়া শিশুদের হাত নাড়া– অনবদ্য। মেঘের দেশে এসে এত উষ্ণ অভ্যর্থনা– ভাবা যায় না।