কিছু কিছু মানুষের মতো কিছু কিছু জায়গাও প্রিয় হয়ে ওঠে কারও কারও কাছে। বার বার ছুটে যায় প্রিয় সান্নিধ্যে। কেবল স্বপ্ন কিংবা কল্পনায় নয়, বাস্তবেও। কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসতে পারলে শরীর-মন দুটোই উজ্জীবিত হয়। বাঙালির ভ্রমণ মানচিত্রে এমনই তিনটে জায়গা দীঘা-পুরী-দার্জিলিং। রসিক বাঙালি এ জন্যেই বোধহয় নিজেদের নাম রেখেছে ‘দীপুদা’। তবে আমি ঠিক এই গোত্রে পড়ি না। আমার পছন্দের জায়গা দার্জিলিং-এর খুব কাছে, সাধারণ পর্যটকদের হিসাবের বাইরে, পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ স্থান সান্দাকফু। সাধারণ মানুষের ভ্রমণ তালিকায় সান্দাকফু না আসার কারণ অবশ্যই যাতায়াতের দুর্গমতা। তবে সে সমস্যাও কেটে যেতে বসেছে। মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু পর্যন্ত দ্রুত গতিতে চলছে রাস্তা তৈরির কাজ। কংক্রিটের ঢালাই রাস্তা। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে যে মধ্যবিত্ত বাঙালির পর্যটন মানচিত্রে সান্দাকফু একটা বিশেষ জায়গা করে নেবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। অন্তত এবারের সান্দাকফু ভ্রমণ অভিঞ্জতা সে রকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কাচ্চা-বাচ্চা নিয়ে সপরিবারে সান্দাকফু যেতে এর আগে কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।
এই নিয়ে তৃতীয়বার সান্দাকফু-তে। প্রথম দুবার ট্রেকিং করে গেলেও, এবার হাতে সময় কম থাকায় ল্যান্ডরোভারে যাওয়া মনস্থির করেছিলাম। পরিকল্পনা মতো পাঁচ জনের ছোটো দলটা কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি হয়ে আড়াই হাজার টাকার রিজার্ভ গাড়িতে দুপুরের মধ্যেই মানেভঞ্জন পৌঁছোলাম। পথে উপরি পাওনা ঘণ্টা খানিকের চা বিরতিতে মিরিক। মে মাসের শেষ সপ্তাহে মিরিক লেকের ধারে সবুজ ঘাসের গালিচা পাতা। লেকের জল স্বচ্ছ। মাত্র মাস খানেক আগেই এখানে ভরা বসন্ত অর্থাৎ ফুলের মরশুম ছিল। এখনও ছিটেফোঁটা যেটুকু আছে তাতেও চোখ জুড়িয়ে যায়। বুড়ি ছোঁয়ার মতো মিরিকে সময় কাটিয়ে মানেভঞ্জনের পথে রওনা দিলাম।
মানেভঞ্জন সান্দাকফুর গেটওয়ে। নেপালি ভাষায় মানেভঞ্জন শব্দের অর্থ দুই গিরিশিরার মিলনস্থল। টংলু আর জোড়পোখরি পাহাড়ের মাঝখানে বাটির মতো উপত্যকা। যার দক্ষিণ-পশ্চিম ঢালে নেপাল আর উত্তর-পূর্ব ঢালে ভারত, মাঝখানে সীমারেখা বলতে ছোটো একটা নালা। নালা পেরিয়ে অবলীলায় ভারত-নেপাল করছে মানুষ। সীমান্তরক্ষীর কোনও চোখরাঙানি নেই। দোকানপাট-বাড়িঘর-হোটেল-রেস্তোরাঁ-চোর্তেন আর মন্দির নিয়ে মানেভঞ্জন এখন ঘিঞ্জি শহর। বিকালটা এলোমেলো এদিক ওদিক ঘুরে, মন্দির ও গুম্ফা দর্শন করে হোটেলে ফিরতে রাত ন’টা বাজল। সেই সঙ্গে সান্দাকফু যাওয়ার ব্যবস্থা, অর্থাৎ ল্যান্ডরোভারের ব্যবস্থাও পাকা করে রাখলাম।