হাতছানি
তখন তেড়ে বর্ষা, জুনের শেষের দিক... বেড়াবার জায়গা খুঁজছি নেটে। আলগোছে এটা-সেটা দেখতে দেখতে চোখে পড়ল বরফঢাকা পাহাড়ের কোলে পান্না সবুজ শেষনাগ। পাহাড়ি ঢালে ভেড়া চরছে আর রুক্ষ প্রকৃতির মাঝখান দিয়ে সুতোর মতো এক চিলতে পথের পরতে-পরতে এঁকেবেঁকে মানুষের সারি। লোভ উসকে দেবার একশো আয়োজন নিয়ে কভার পিকচার হাতছানিতে রেডি। পেজটি আসলে অমরনাথ যাত্রার ও যাত্রার ফর্ম এখান থেকেই জমা নিচ্ছে। ব্যস, নেটসার্ফিং-এর ক্যাজুয়াল ভাব গোল্লায় গিয়ে লাফিয়ে উঠল মন ‘যাব’ বলে। কিন্তু কীভাবে? বাকি প্রয়োজন মিটলে তবে না! মিডিল অফ জুনে যাত্রা শুরু হয়েছে যা বন্ধ হতে জুলাইয়ের শেষ। তার মানে হাতে পাচ্ছি বিশ-বাইশটা দিন। এর মধ্যেই ফর্ম ফিলআপ, রিজার্ভেশন, পোশাক-আশাক, ফিট সার্টিফিকেট... কঠিন জায়গার কঠিন প্রস্তুতি।
খ্যাপামি
জানি, ঝাঁকায় করে টিকিট নিয়ে রেল দফতর বসে নেই যে চাইলেই দু’খিলি পান খাইয়ে হাত বাড়াবেন ‘নিন গো দিদি’ বলে। তবু... চোখের ওপর উড়ছে অমরাবতীর আকাশ- বরফঠান্ডা বাতাস। পিছু হটার ভাবনা আমলই পাচ্ছে না। এ পথ মোটে দেড়-দু’মাসের জন্য খুলেই ফের তুষার গ্রাসের কবলে চলে যায়। সুতরাং মিস মানে সেই পরের বছর। সঙ্গে-সঙ্গে নেট-এ যেতে হল ট্রেন টিকিটের সাইটে। কিন্তু সবাই যে খেয়ালি নন তার ছাপ ছড়িয়ে আছে অ্যাভেলেবিলিটির পাতায়। ‘নো রুম’ পড়তে-পড়তে চোখে চালশে। ওরই মধ্যে হিমগিরি এক্সপ্রেসে ক’টা বাঁচাখোঁচা তখনও। এবার সঙ্গী হিসেবে যাদের পেতে চাই, জিজ্ঞাসা না করেই টিকিট কাটলাম তাদেরও।
বেড়ানোর ইচ্ছে একটা খ্যাপামির মতো। আমি ফড়িং হয়ে ছোট্ট পাখায় উড়ি তো মন দৌড়োয় ফিঙের ডানায়। অথচ ক-ত-কি-ছু। আছে ফর্ম ফিলআপ, সঙ্গীদের অনুমোদন... তবু ডেফিনিট পা ফেলেছি যেই, মন ‘পিসুটপ’-এর চড়াই ভাঙছে। ‘পেতে চাই’-টা জোরদার ছিল বলে এগোনো যাচ্ছে আর ইচ্ছেকে মান দিতে গেলে যেতেও হয়। আগ্রাসী আমি আদ্যান্ত এগিয়েও ঝকমারি চলছেই। বাকিদের যে বলাই হয়নি। কিন্তু কে জানত ঘাপটি মেরে আছে বিপুল বিস্ময়। ‘অমরনাথ’ শোনামাত্র তাদের উৎসাহের বাঁধ ভাঙল, বুঝিয়ে দিল ভুল।