কলকাতা থেকে ছেড়ে ভূতল পরিবহনের বাস যখন পেট্রাপোল সীমান্তে পৌঁছোল, তখনও সীমান্ত শহর পুরোপুরি জেগে ওঠেনি। চোখেমুখে নজরে আসে আলসেমিভাব। এক্ষুনি প্রবেশ করব বাংলাদেশের যশোর জেলায়। ওই দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ! পশ্চিমবঙ্গের মতো গাছপালা, মাটির রং, ভাষা এক, অন্তরঙ্গতায় এক, তবুও আলাদা দেশ-- ভাবলেও মন হয়ে ওঠে ভারাক্রান্ত। মাঝে ‘নো ম্যান’স ল্যান্ড’, তার এপাশে বিএসেফ এবং ওপারে বিডিআর-এর রক্তচক্ষু। আমরা যারা ভিসা নিয়ে চলেছি ভ্রমণে, তারা যেন অপরাধ করে ফেলেছি! কাস্টমসের ঝামেলা অতিক্রম করতে পেট্রাপোল ও বেনাপোল মিলিয়ে ৩ ঘণ্টা লেগে গেল। পেট্রাপোল উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় এবং বেনাপোল বাংলাদেশের যশোর জেলায়। ছুটে চলল বাস। দেড় ঘণ্টা চলার পর মগুরা পৌঁছে মধ্যাহ্নভোজনের বিরতি। বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম অন্নগ্রহণ করলাম।
ভায়ানা মোড়ে পৌঁছে তেল ভরে বাস ছুটে চলল ঢাকার দিকে। গড়াইনদী অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রবেশ করলাম ফরিদপুর জেলায়। বাবা-মামা-দাদু-মাসি, প্রত্যেকের কাছে শোনা বাংলাদেশের সব কাহিনি মনে পড়ে যায়। এই সেই ফরিদপুর! একটা চৌমাথা থেকে ডানদিকে ঘুরে সোজা বাস ছুটে চলল বিপুলা পদ্মার দিকে। গোয়ালন্দকে অতিক্রম করে পৌঁছে গেলাম দৌলতদিয়া ঘাটে। গোয়ালন্দ পৌঁছে মনে পড়ে গেল, বাংলা বিভাজনের সময় সবাই যখন বাংলাদেশ ছেড়ে পালাচ্ছিল তখন এই গোয়ালন্দ হয়েই সিংহভাগ লোক পাড়ি দিয়েছিল অন্য বাংলায়, বহু প্রাণহানিও হয়েছিল। ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায় যেন চোখের সামনে খুলে যায় একটু একটু করে। পৌঁছে যাই দৌলতদিয়া ঘাট। সামনে দিগন্তবিস্তৃত পদ্মা। বাস বার্জে উঠে গেল। বিরাট বড়ো বার্জ। পদ্মা অতিক্রম করে বার্জ যখন অপর পাড়ে মানিকগঞ্জ জেলার পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছোল, ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক চারটে বাজে। পদ্মার বুকে ভাসতে ভাসতে শুনলাম পদ্মা নাকি আগে অনেক বেশি চওড়া ছিল। অতিক্রম করতে সময় লাগত প্রায় ঘণ্টা খানেক, এখন আধঘণ্টার মতো লাগে। গভীরতাও অনেক কমে গেছে।