একাকিত্ব ঘোচাতেই শুধু নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও প্রয়োজন অন্তত একজন ভালো বন্ধু। বর্তমান জীবনচর্যায় মানুষ বড়ো বেশি একাকিত্বের শিকার। বিবাহবিচ্ছিন্ন হয়ে জীবন কাটানো অথবা বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া, এখন আর নতুন কোনও ঘটনা নয়। একক জীবনযাপনে কেউ কেউ মুক্তির আনন্দ খুঁজে নেন। কেউ আবার ডিপ্রেশনের শিকার হন। স্বেচ্ছায় হোক বা পরিস্থিতির চাপেই হোক– কীভাবে সামলাবেন একাকিত্ব, তারই পরামর্শ রইল এখানে।

যারা দীর্ঘদিন একটানা নিদারুণ একাকিত্বে ভুগছেন, সেইসব মানুষের একাকিত্ব কাটিয়ে ওঠার দশটি উপায় তুলে ধরা হল৷  এই সমাধান যে সবার ক্ষেত্রে সমান ভাবে কাজ করবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তবে পুরোপুরি বিফলে যাবে, সেটাও বলা যাবে না।

আমাদের পরামর্শ

  • এমন কিছু করুন যাতে মনোযোগ সরে যায়। একাকিত্ব একটি অস্থায়ী অনুভূতি। জীবনের বিভিন্ন পট পরিবর্তনে আমরা একাকী বোধ করি। সেটা হতে পারে নতুন কলেজ জীবন শুরু করা বা সম্পূর্ণ নতুন কোনও স্থানে বসবাস শুরু করা৷ এই সময়ে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ একাকিত্বের কষ্ট থেকে আমাদের দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া মনে রাখবেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু একাকিত্ব বোধ ফিকে হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে এমন কোনও কাজ করুন, যেটা আপনি পছন্দ করেন। বিশেষ করে সেই কাজটি, যেটা আপনার মনোযোগ এতটাই কেড়ে নেবে যে, সময় কীভাবে কাটছে আপনি ভুলে যাবেন। সেটা হতে পারে বই পড়া, কোনও শখের চর্চা বা পছন্দের কোনও কাজ করা। এই কাজগুলো আপনার শরীর ও মন দুই-ই ভালো রাখবে।

 

  • সামাজিক সংগঠন বা সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে যোগ দিন। এই সমাধানের বিষয়টি শুনতে একটু গতানুগতিক ঠেকবে। যদি আপনার একাকিত্বের কারণ আপনার আশেপাশে লোকজনদের সঙ্গে দেখা না হওয়ার ফলে হয়, তাহলে এটি আপনার জন্য ভালো সমাধান হতে পারে। তবে এই সমাধান সবার জন্য নয়। এর পরিবর্তে অনাথ আশ্রম বা বৃদ্ধাশ্রমে সময় দিন। এতে ভালো কাজের জন্য মানসিক তৃপ্তি পাবেন। যদি অপরিচিতদের সাথে কথা বলার বিষয়টি আপনাকে ভীত বা অস্বস্তিতে ফেলে- তাহলে, এমন একটি সংগঠন বেছে নিন যেখানে আপনি কাজের পাশাপাশি সৃজনশীল কিছু করতে পারবেন। হয় কোনও গানের বা নাটকের দলে যোগ দিন অথবা কিছু তৈরি করা শিখুন। এতে করে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কারও সঙ্গে কথা বলার চাপে থাকতে হবে না। সেইসঙ্গে নিজের পছন্দের কোনও কাজ বেছে নেওয়ায় আপনি হয়তো সেখানে এমন কাউকে পেয়ে যাবেন, যার সঙ্গে আপনার চিন্তা ভাবনা মিলে যাবে।

 

  • জীবনকে ইতিবাচক করতে নিজস্ব চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন আনুন। একটি সমীক্ষায় মানুষের সহানুভতির মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যারা নিজেদের একাকী দাবি করেন, তারা সমাজের অন্য মানুষের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল থাকেন। বিশেষ করে তাদের প্রতি, যারা কোনও কষ্টকর সময় পার করছেন। পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া বা মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠার বিভিন্ন কৌশল শিখে নিতে পারেন আপনারই মতো কোনও একা অথচ পজিটিভ মনোভাবের মানুষের সান্নিধ্যে এসে।

 

  • দ্বিধা কাটিয়ে কথোপকথন শুরু করুন। অপরিচিতদের কারও সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করার জন্য এক ধরনের মানসিক শক্তির প্রয়োজন। কিন্তু এজন্য আপনাকে শুরুতেই গভীর কোনও কথা বলতে হবে, এমনটা নয়। খুব সাধারণ কথাবার্তা দিয়ে আলাপচারিতা শুরু করুন।

When Feeling Lonely

  • আপনার অনুভূতি সম্পর্কে বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সাথে কথা বলুন। যদিও এ ধরনের সমাধান দেওয়া যতটা সহজ, বাস্তবে করা ততটা সহজ না। কিন্তু আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে পরিবারের বা তার বাইরের কোনও একজন মানুষকে, যার উপর আপনি কিছুটা নির্ভর করতে পারবেন। তাঁর কাছে মনের কথা শেয়ার করুন।

 

  • প্রতিটি মানুষের ইতিবাচক দিকটি দেখার চেষ্টা করুন। যারা একাকিত্বে ভোগেন, তাদের অন্যের প্রতি বিশ্বাসের ভিত্তিটা নড়বড়ে। তাই এই সমাধানটির মূল বিষয়বস্তু হল, মানুষের ভেতর থেকে এমন ভালো কিছু খুঁজে বের করা যেন, তার প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে আপনি যদি মনে করেন যে, কেউ আপনাকে তিরস্কার করেছে বা কটু কথা বলেছে- তাহলে ভেঙে না পড়ে, ইতিবাচক ভাবে ভাবুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনার বিরুদ্ধে তার কথাগুলো সত্য কিনা। সে ব্যাপারে কোনও প্রমাণ আছে কিনা। না হলে ভিন্ন ভাবে ভাবুন। সম্ভবত তারা ব্যস্ত বা ক্লান্ত ছিল অথবা তাদের মন খারাপ বা মানসিক চাপের মধ্যে ছিল। আপনার হয়তো এক্ষেত্রে কিছুই করার ছিল না।

 

  • আপনি কেন একাকিত্ব বোধ করেন সে ব্যাপারে জানুন। প্রতিটি মানুষের একাকিত্বের কারণ আলাদা। কেউ হয়তো শারীরিক ভাবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করেন, আবার কেউ হয়তো শিকার হয়েছেন সামাজিক বৈষম্যের। কারও পক্ষে অন্যকে বিশ্বাস করা কঠিন, আবার অনেকেই জানেন না নিজের মন-মানসিকতার সঙ্গে মিল আছে এমন মানুষ কোথায় পাবেন। একাকিত্ব থেকে বেরিয়ে আসার, সমাধান বের করার সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হল, কেন একাকিত্ব অনুভব করছেন সেটা আগে জানা। এক্ষেত্রে আপনার সমাধান যদি কাজ না করে, তাহলে অন্য কিছু চেষ্টা করুন।

 

  • অপেক্ষা করুন, মন ভালো হওয়ার। আমরা জানি যে, একাকিত্বের এই অনুভতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্থায়ী। একাকিত্বের এই অনুভতি সময়ের সাথে চলে যায়। তাই সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা দরকার। তবে যারা দীর্ঘস্থায়ী একাকিত্বে ভুগছেন, তাদের জন্য হয়তো কুকুর বা অন্য কোনও পোষ্য রাখা কার্যকর হতে পারে।

 

  • প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় কাটিয়ে উঠুন। মানুষকে আপনার সাথে কোনও কাজ করতে বলা, বা কারও সাহায্য চাওয়া ভালো অভ্যাস। প্রত্যেকেই এটা ভাবতে চান যে, তাদের মতো হয়তো অন্যরাও কোনও কাজের প্রতি সাড়া দেবেন। কিন্তু তাদের থেকে কখনও কখনও নেতিবাচক উত্তর আসতে পারে। আপনাকে এই ‘না’ শোনার ভয় কাটিয়ে উঠতে হবে। কেউ যদি বলেন যে, সেদিন তিনি ব্যস্ত আছেন, তাহলে বুঝতে হবে সত্যিই হয়তো তিনি ব্যস্ত আছেন। তাই হুট করে এটা ভেবে বসবেন না যে, তারা আপনাকে এড়িয়ে চলছেন। অন্যের ‘না’-কে স্বাভাবিক ভাবে নিন।

 

  • নিজেকে ভালোবাসুন। সাজগোজ করা বা নিজের জন্য একটা নতুন রেসিপি ট্রাই করার মধ্যেও কিন্তু আনন্দ আছে। জীবনের ছোটো ছোটো অনুভব থেকে আনন্দ খুঁজে নিন।

 

এটা ঠিক যে, সব সমাধান সবার জন্য কাজ করবে না। একাকিত্বে আক্রান্তদের একেকজনকে একেক ভাবে নিজেদের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। একটি সমাধান যদি কাজ না করে, তাহলে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করুন। জীবনকে ভালোবাসুন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...