একটি সমীক্ষা অনুযায়ী (৪২টি প্রশ্নের উপর করা সমীক্ষা) ৪৭ শতাংশ অভিভাবক প্রতিদিনই বাচ্চাকে কম করে ১৫ মিনিট নিজের স্মার্টফোন নিয়ে খেলার অনুমতি দিয়ে থাকেন। এছাড়াও আইপ্যাড, ল্যাপটপ ইত্যাদি নিয়ে বাচ্চাদের ব্যস্ততা এখন আগের থেকে অনেক বেশি, কারণ পরিস্থিতি তাদের গ্যাজেটস-এর উপর নির্ভরশীল করে তুলেছে।
এখন হাইটেক-এর জমানা। মোবাইলের বা এই ধরনের ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেটস-এর একটা বোতাম টিপলেই এখন সবকিছু হাতের মুঠোয়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বাচ্চাদের ক্রমাগত বাড়তে থাকা কম্পিউটার ও মোবাইলের সঙ্গে সংযোগ। বাচ্চাদের অ্যাক্টিভিটি, পড়াশোনা সবই চলছে অনলাইএন। এই পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে মোবাইল বা গ্যাজেটস থেকে দূরে রাখা কিছুতেই সম্ভব নয়।
এখন এমন সময় এসেছে যে ২ বছরের বাচ্চাও টাচ্ স্ক্রিন ফোন চালাচ্ছে, লক খুলে ফেলছে, ক্যামেরা দিয়ে ছবিও তুলছে। সমীক্ষা অনুযায়ী মা-বাবাই বাচ্চার হাতে নিজেদের মোবাইল গুঁজে দিচ্ছেন, কম করে ১৫ মিনিট হলেও।
৬২ শতাংশ অভিভাবকেরা জানালেন, তারা বাচ্চাদের জন্য নতুন অ্যাপস-ও ডাউনলোড করে দেন। ১০ জনের মধ্যে ৯ জন অভিভাবকদের মতে ছোটো থেকেই বাচ্চারা ফোন সোয়াইপ করতে শিখে যায়। অন্তত ৫ জনের মতে তাদের বাচ্চারা ফোন আনলক করতেও পারে। অনেকেই আবার বললেন, বাচ্চারা ফোনের অন্যান্য ফিচারগুলিও খুঁজে বার করার চেষ্টা করে।
গ্যাজেটস-এর জন্য স্বাস্থ্যের ক্ষতি
মাইকেল কোহেন গ্রুপ দ্বারা করা একটি সমীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে টিনএজার্স-রা মোবাইল নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করে। সারাদিন মোবাইল নিয়ে বসে থাকার কারণে স্থলতার সমস্যা তাদের মধ্যে বাড়ছে। এছাড়াও আইপ্যাড, ল্যাপটপ এসবে সারাদিন চোখ রেখে বসে থাকার কারণে, শোয়ার কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। শারীরিকের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। মোবাইল, কম্পিউটারে যে ধরনের সার্চ করে থাকে বাচ্চারা সেটার সোজাসুজি এফেক্ট পড়ে বাচ্চাদের মস্তিষ্কে, ওদের চিন্তাধারায়।
এছাড়াও এগুলির অত্যধিক ব্যবহারের অভ্যাস বাচ্চাকে সাইবার বুলিং-এর শিকারও করে তুলতে পারে। চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ (CRY) দিল্লিতে এনসিআর-এর ৬৩০ জন কিশোরকে নিয়ে একটি সার্ভে কনডাক্ট করেছে যেখানে দেখা গেছে প্রায় ৯.২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী সাইবার বুলিং-এর শিকার হয়েছে, যার মধ্যে অনেকেই নিজের মা-বাবাকে কিছু বলে উঠতে পারেনি।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনলাইন স্টাডি এবং ইন্টারনেট অ্যাডিকশন-এর উপর করা অধ্যায়নে জানা গিয়েছে বাচ্চা যত ইন্টারনেট আর গ্যাজেটস ব্যবহার করবে ততই এই ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়তে থাকবে। অনেক সময় বাচ্চারা নিজেরাই সাইবার অপরাধের সঙ্গে অজান্তেই জড়িয়ে পড়ে। কারও উপর রাগ থাকলে, এটাকেই সে সহজ রাস্তা বলে মনে করে নেয়। এটাতে নিজের পরিচয়ও সে গোপন রাখতে সক্ষম হয়।
সাইবার বুলিং-এর মতো কারও সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো, কাউকে সমাজের চোখে নীচু দেখাবার মানসিকতায় তার গোপন তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি নানা অপরাধের শিকার হতে দেখা যায় বাচ্চাদের। এছাড়াও মা-বাবার সঙ্গে ইন্টার্যাক্ট করতেও বাচ্চারা ভুলে যায় কারণ গ্যাজেটসই তাদের জীবনে প্রাধান্য পায়। এটার সঙ্গে আছে রেডিয়েশনের এক্সপোজার। প্রকৃতির থেকেও বাচ্চারা নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে। বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করার বদলে কম্পিউটার, মোবাইলে গেমস খেলতেই তাদের সময় চলে যায়। বেশিক্ষণ স্ক্রিনে চোখ রাখার ফলে চোখের সমস্যাও শুরু হয়ে যায়। ছোটো থেকেই চোখে চশমা ওঠে।
অভিভাবকেরা, বাচ্চাদের শখ, ইচ্ছাপূরণ করতে গিয়ে অজান্তেই তাদের ক্ষতি করে বসেন। গ্যাজেটস-এর নেশা ধীরে ধীরে বাচ্চাকে গ্রাস করতে থাকে। মা-বাবার উচিত হচ্ছে সন্তানকে বাড়িতে গ্যাজেটস-এর সঙ্গে সর্বক্ষণ ছেড়ে না রেখে সারা বিশ্বের সঙ্গে তাকে পরিচিত করানো। বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করানোটা অন্যতম বিকল্পের পথ হতে পারে। টেকনোলজির অ্যাডিকশনের বদলে তাদের এমন কিছু অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে পরিচিত করানো উচিত যাতে তার মানসিক, শারীরিক এবং ইমোশনাল বিকাশ ঘটে।