সব অভিভাবকদেরই স্বপ্ন থাকে তাদের সন্তান বড়ো হয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়র বা চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। ছোটো থেকেই বাচ্চার মস্তিষ্কে এটা গেঁথে দেওয়া হয়, একজন কেউকেটা তাকে হতেই হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেরিয়ারের এই চাপ সহ্য করতে না পেরে শিক্ষার্থী, কম্পিটিটিভ পরীক্ষার মার্কশিট নকল করেও বাড়িতে মা-বাবাকে দেখায়।
বাচ্চাদের মধ্যে এই অপরাধপ্রবণতার জন্য দায়ী কিন্তু আসলে তাদের মা-বাবাই। বড়োরা নিজেদের পছন্দের পেশাকে জোর করে নিজেদের সন্তানকে গ্রহণ করার জন্য জবরদস্তি করা থেকেই, এই মিথ্যার আশ্রয় নেওয়াটাই একমাত্র উপায় বলে বাচ্চারা ভেবে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চারা নিজেদের পছন্দ মা-বাবাকে জানালেও তাদের বকে ধমকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। বোঝানো হয় মা-বাবাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। অথচ অভিভাবকেরা এটা বোঝার চেষ্টা করেন না যে, তাঁর সন্তানের যোগ্যতা কতটা, কী তার মনের ইচ্ছা, কোন পেশা তার পছন্দের।
কৌশিক না-তো ইঞ্জিনিয়র হতে চেয়েছিল আর না ম্যানেজমেন্ট পড়ায় তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল। কিন্তু তার বাবার জেদ, ছেলে ইঞ্জিনিয়রই হবে। তার ইচ্ছের কথা জানতে না চেয়ে টুয়েলভ পাশ করতেই তাকে বেঙ্গালুরু পাঠিয়ে দেওয়া হল ইঞ্জিনিয়রিং পড়তে। কিন্তু দুবছরের মধ্যেই কৌশিক বেঙ্গালুরু ছেড়ে কলকাতায় বাড়িতে ফিরে এল কারণ পড়াশোনাতে মন বসাতে পারছিল না। মায়ের জেদ রাখতে ম্যানেজমেন্ট-ও ট্রাই করল কিন্তু সেখানেও অসফল হল। অথচ প্রথমেই যদি তার মা-বাবা ছেলের কথা শুনতেন! কৌশিক এগ্রিকালচারাল লাইন-এ যেতে চেয়েছিল। কিন্তু পরিণাম আজ এই দাঁড়িয়েছে যে, সে আজও বেকার এবং কোনও জিনিসে তার কোনও আগ্রহ নেই।
বন্দনার মা-বাবা ইন্দোরে থাকেন। হঠাৎ-ই কোটা থেকে মেয়ের একটা চিঠি পেলেন, তাতে লেখা, আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমরা যা চেয়েছিলে সেটা পূরণ করতে আমি অসমর্থ। কিন্তু প্লিজ তোমরা ছোটো ভাইয়ের উপর কেরিয়ারের প্রেশার দিও না। ও যা পড়তে চায় ওকে পড়তে দিও। এর দিন দশেকের মধ্যেই বন্দনার আত্মহত্যা করার খবর পেলেন ওর অভিভাবকেরা। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে বন্দনাকে কোটায় পাঠানো হয়েছিল।