রোদ, ধুলোময়লা, দূষণ এবং সর্বোপরি লু-এর প্রকোপ– আপনার ত্বকের শত্রু অনেক। স্বভাবতই আপনাকে গড়ে নিতে হবে একটি সুরক্ষাবলয়। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে তাই নিশ্চিত হয়ে নিন, আপনি সুরক্ষিত তো?
১) ক্লিনজিং-এ ঝকঝকে ত্বক
চটচটে ঘাম আর ধুলোময়লা জমে যাওয়া, এই সময়ের কমন সমস্যা। তাই ডিপ ক্লিনজিং একান্ত জরুরি। দিনে ও রাতে, মোট দুবার ক্লিনজিং করুন। অ্যালোভেরা, ল্যাভেন্ডার, লেমন, মিল্ক এক্সট্র্যাক্ট, পিপারমিন্ট ও সি-উইড থেকে প্রস্তুত ফেস ওয়াশ ও জেল, ভালো ক্লিনজারের কাজ করে। ক্লিনজিং-এর পর টোনিং ত্বকের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়। টোনিং ত্বকে উপস্থিত অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ত্বকে ধুলোমাটি জনিত ইনফেকশন রোধ করে। ক্লিনজিং এবং টোনিং ত্বকের ধরন অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত। সান ট্যানিং থেকে মুক্তি পেতে, অ্যালোভেরা জেল নিয়মিতভাবে ব্যবহার করুন। চুলের চটচটে ভাব সরাতে পিপারমিন্ট ট্রিটমেন্ট শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
২)ঘামাচি থেকে মুক্তি
গরমকালে স্বেদগ্রন্থি থেকে ঘাম নিঃসৃত হয় এবং ত্বকের উপরে তা জমলে সাধারণ প্রক্রিয়ায় বাষ্পে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্বেদগ্রন্থি অতিমাত্রায় ঘাম উৎপন্ন করে অথচ ত্বকের উপরে তা নিঃসৃত হওয়ার পথে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই কারণেই ত্বকে ঘামাচি সৃষ্টি হয়। অনেক সময় এই ঘামাচি বড়ো বড়ো দানার আকার নেয়, প্রদাহ বা চুলকানির অনুভূতি হয়।
ঘামাচির সমস্যা থেকে বাঁচতে, অতিরিক্ত রোদে বেরোবেন না। ঠান্ডা জলে বারবার স্নান করুন। গ্লিসারিন-যুক্ত সাবান ব্যবহার করুন। বরফের কুচি মুখে ঘষুন। রাতে শোওয়ার আগে ক্যালামাইন লাগান।
৩) ফোটো অ্যালার্জি থেকে বাঁচুন
অতি সংবেদনশীল ত্বক, গরমকালে সহজেই শিকার হয় ফোটো অ্যালার্জির। এর ফলে ত্বকের উপর লাল চাকা চাকা র্যাশ বের হয় এবং চুলকোতে থাকে। ত্বকের উন্মুক্ত অংশে এই অ্যালার্জির প্রকোপ বেশিমাত্রায় হয়।
এই ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচতে ত্বককে রোদ থেকে দূরে রাখুন। খোলামেলা পোশাকের বদলে সুতির ফুলস্লিভ পোশাক পরুন। ত্বক পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের চিকিৎসাধীন থাকুন।
৪) সানস্ক্রিণ-এ স্কিন কেয়ার
গরমে আলট্রাভায়োলেট-রে আমাদের চরম শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। এর প্রভাবে ত্বকে নানারকম সমস্যা দেখা দিতে থাকে। সানবার্ন থেকে র্যাশ, ট্যানিং, দাগছোপ এমনকী রিংকল্স-এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই পরিস্থিতিতে ত্বককে সূর্যকিরণ থেকে সুরক্ষা দেওয়া বিশেষভাবে জরুরি হয়ে যায়। এই কাজটাই করে সানক্রিন। তবে সানস্ক্রিণ সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করুন।
স্নান সেরে বাড়ি থেকে বেরোনোর অন্ততপক্ষে ১৫ মিনিট আগে এসপিএফ থাকা সানস্ক্রিণ ব্যবহার করুন। তবে শুধু বেরোনোর জন্যই নয়, বাড়িতে থাকাকালীনও এটি ব্যবহার করা উচিত। আর্টিফিশিয়াল লাইট-এ রেডিয়েশনের মাত্রা কম হয় ঠিকই কিন্তু সূর্যরশ্মির প্রভাব ঘরের স্বাভাবিক পরিবেশেও থাকে। রান্না করার সময় গ্যাস-এর আঁচেও ত্বক ঝলসে যায়। তাই ক্ষতি এড়াতে ত্বকে সানস্ক্রিণ অবশ্যই প্রয়োগ করুন।
স্কিন এক্সপার্ট-দের মতে যে-কোনও সানস্ক্রিণ-এর প্রভাব ত্বকে অন্তত ঘন্টা তিনেক স্থায়ী হয়। তাই ব্যাগে সানস্ক্রিণ অবশ্যই রাখুন যাতে ৩-৪ ঘন্টার ব্যবধানে পুনরায় লাগাতে পারেন। অনেকেই ভাবেন, সুইমিং করার সময় সানস্ক্রিণ লাগানোর প্রয়োজন নেই। এই ধারণা একেবারেই ভুল। সুইমিং পুলের জলে উপস্থিত ক্লোরিনের প্রভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাই জলে নামার আগে অবশ্যই ওয়াটারপ্রুফ সানস্ক্রিণ ব্যবহার করুন।
ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়, তার উপর ঘাম ও ময়লা বেশি জমে। এই ধরনের ত্বক হলে অয়েল বেস্ড সানস্ক্রিণ এড়িয়ে চলুন। নাহলে অতিরিক্ত তেলাভাবের জন্য ত্বকে অ্যাক্নে হতে পারে। তাই সাধারণ সানস্ক্রিণ-এর সঙ্গে ক্যালামাইন মিশিয়ে লাগান।
৫) ব্যালেন্সড্ ডায়েট
ত্বকের উপর যত ভালো কোম্পানির প্রোডাক্ট-ই ব্যবহার করুন না কেন, ভেতর থেকে ত্বক যদি সুস্থ রাখার ব্যবস্থা না নেন, সুফল পাবেন না। তাই সৌন্দর্য প্রসাধনের পাশাপাশি, নজর দিন ব্যালান্সড্ ডায়েট-এর উপর।
গরমে ভাজাভুজি, তেলমশলা-যুক্ত জাংক ফুড এড়িয়ে চলুন। এমন খাবার খান যা সহজে হজম হয়ে যায়। মরশুমি ফল, সবজি অবশ্যই ডায়েট-এ রাখুন। রসালো ফল যেমন তরমুজ, খরমুজ, আম, লিচু, মুসম্বি বেশি করে খান। প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে গ্রিন স্যালাড খান। প্রচুর জল খান। জুস, লেবুর জল, ছানার জল, লস্যি ব্যাগে নিয়ে বেরোন। গ্রীষ্ম-কে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বরণ করুন।