চারপাশে লক্ষ্য রাখলেই আমরা বুঝতে পারব মানুষ যত বেশি আধুনিক প্রযুক্তির প্রতি নির্ভরশীল হয়ে উঠছে ততই জীবনের নানা সমস্যার গভীরে পৌঁছে যাচ্ছে। সাধারণ জীবনযাত্রায়, পড়াশোনায়, কর্মক্ষেত্রে সর্বত্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রতিটি ব্যক্তিকে। প্রতিনিয়ত Mental Pressure বেড়ে চলেছে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে।

এই সমস্যা শুধু বড়োদের নয়, বাচ্চারাও আজ অতিরিক্ত আধুনিকতার শিকার। প্রতিযোগিতার মনোভাব শৈশব থেকেই অভিভাবকেরা এমনকী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও তাদের শিশুমনে প্রবেশ করাচ্ছে।

এর উপর রয়েছে করোনার মতো অতিমারির প্রকোপের পরিণাম। ২০২০ সাল থেকে করোনার প্রকোপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে সরকার বাধ্য হওয়ার ফলে ছোটো ক্লাস থেকে উঁচু ক্লাসের সকল শিক্ষার্থীই বাধ্য হয়েছে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষাবর্ষ পার করতে। এটা কিন্তু মোটেই সহজ হয়নি বাচ্চাদের জন্য। দীর্ঘ সময় কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে চোখ রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া বড়োদের কাছেই দুঃসাধ্য যেখানে, সেখানে বাচ্চাদের মানসিক চাপ সৃষ্টি হওয়াটা কোনও আশ্চর্যের ব্যাপার নয়।

সবথেকে দুঃখের বিষয় ধীরে ধীরে করোনার দুটো ঢেউ পার করে যখন পরিস্থিতি প্রায় ঠিক হওয়ার মুখে তখন নতুন করে করোনার তৃতীয় ঢেউ, লকডাউনের আশঙ্কাকে আবার চাগিয়ে তুলতে উদ্যত। এই অবস্থায় অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের উপর সবসময় দৃষ্টি রাখা। আসুন জেনে নিই, কী ভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান মানসিক উদ্বেগে রয়েছে কিনা?

প্রতিযোগিতার মানসিকতা এবং আধুনিক পরিস্থিতির চাপে বাচ্চাদের উদ্বেগ সবথেকে বেশি, নিজেদের পড়াশোনা এবং পরীক্ষায় ভালো ফল করার চাপ থেকেই সৃষ্টি হয়। তাদের মনের ভিতর ভীতি জন্মায় যেটা অনেক সময় তারা প্রকাশ করতে পারে না। এছাড়াও অভিভাবকেরা আশা করেন তাদের সন্তান লেখাপড়া ছাড়াও অন্যান্য অ্যাক্টিভিটিতেও পয়লা নম্বরে থাকবে। মা-বাবার আশানুরূপ ফলাফল যদি বাচ্চা করতে না পারে, তাদের শিশুমনকে হতাশা এবং উদ্বেগ গ্রাস করে। এছাড়াও শারীরিক অসুস্থতা এবং পরিবারে প্রিয়জনের মৃত্যুর কারণেও বাচ্চার মনে অবসাদ জায়গা করে নিতে পারে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার আচরণ এই ক্ষেত্রে বড়োদের মতো হয় না। সাধারণত বাচ্চা মানসিক চাপে থাকলে নীচের লক্ষণগুলি দেখে অভিভাবকেরা সন্তানের মানসিক স্থিতি উপলব্ধি করতে পারবেন।

 

খাবারে অনীহা : বাচ্চা যখন মানসিক চাপের মধ্যে থাকে তার মধ্যে খাওয়াদাওয়ার ধরন বদলে যায়। যে-কোনও খাবারের প্রতি অনীহা দেখা দেয়। কেউ কেউ কিছুই খেতে চায় না আবার অনেক বাচ্চা বেশি খেয়ে ফেলে। এরকম কিছু আপনার সন্তানের সঙ্গে ঘটলে অবশ্যই সমস্যার কারণ বোঝার চেষ্টা করুন।

মনঃসংযোগের অভাব : সন্তানের মধ্যে পড়াশোনায় অমনোযোগিতা যদি লক্ষ্য করেন, আগেই সাবধান হন। জানার চেষ্টা করুন বাচ্চার উপর পড়াশোনা বা খেলাধুলোয় ভালো ফলাফল করার জন্য অত্যধিক চাপ সৃষ্টি করছেন না তো?

দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুমের মধ্যে জেগে ওঠা : পড়াশোনা নিয়ে উদ্বেগ এবং আশঙ্কার কারণে বাচ্চার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ঘুমের মধ্যে বারবার দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জেগে উঠতে পারে। ঠিকমতো হোমওয়ার্ক করতে না পারা, ক্লাসে টিচারের কাছে বকা খাওয়ার ভয়, পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করার আশঙ্কা বাচ্চার মনের ভিতর ভয়টা আরও বেশি চেপে বসে, যেটা বাচ্চা বাইরে প্রকাশ করতে পারে না। এর ফলে দুঃস্বপ্ন দেখার পাশাপাশি ঘুমের মধ্যে বিছানা ভিজিয়ে ফেলার সমস্যাও বাচ্চার মধ্যে প্রকট হতে শুরু করে। অভিভাবককে বুঝতে হবে সন্তানের মনের মধ্যে জমে থাকা ভয়ের সঠিক কারণটা কী।

আক্রমণাত্মক আচরণ : বাচ্চার মধ্যে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেলে সে অল্পতেই রিয্যাক্ট করে বসবে। পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝলেই, অনেক বাচ্চাই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। আশেপাশে খেয়াল না করেই চিৎকার চ্যাঁচামেচি জুড়ে দিতে পারে। কারও সঙ্গে কথা বলতেও ওরা অনেক সময় অস্বীকার করে। এগুলো মানসিক উদ্বেগ এবং নিরাপত্তাহীনতার লক্ষণ। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝলে বিশেষজ্ঞের মতামতের উপর নির্ভর করুন।

হাইপার অ্যাক্টিভিটি : বাচ্চা অনেক সময় Mental Pressure সহ্য করতে না পেরে জেদ বা রাগ দেখাতে থাকে। যেটা করতে বলা হয় ঠিক তার উলটোটা করে থাকে। এই ক্ষেত্রে অভিভাবকদের ধৈর্য রেখে বাচ্চার সঙ্গে ডিল করতে হবে। বোঝাতে হবে আপনি তাকে ভালোবাসেন এবং যেটা করতে বলেছেন সেটা ওর ভালোর জন্যই বলেছেন। ভালোবাসা আর আদরের মাধ্যমে বাচ্চার মনের ভিতরের নেগেটিভ থিংকিং-কে দূর করতে হবে।

এককথায় বাচ্চার মনে কনফিডেন্স গড়ে তুলতে বাচ্চাকে সবদিক দিয়ে সাহায্য করুন, যাতে ভবিষ্যতে সে নিজেই সমস্ত চ্যালেঞ্জের Mental Pressure সম্মুখীন হয়ে সব সমস্যার সমাধান নিজেই করতে পারে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...