চেন্নাই থেকে পণ্ডিচেরি যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক। এবং যাওয়াও যায় দুভাবে। এক এগমোর স্টেশন থেকে ভিল্লুপুরম গিয়ে ট্রেন বদলে পণ্ডিচেরি। অথবা চেন্নাইয়ে তিরুভাল্লুভার বাস টার্মিনাস থেকে সরাসরি বাসে পৌঁছোনো যায় পণ্ডিচেরি।
দক্ষিণ ভারত যাওয়ার পরিকল্পনা করা মাত্র, চেন্নাইয়ের জন্য রওনা দিলাম। এক সময়ে মাদ্রাস এখন চেন্নাই। বালুকাময় বিস্তীর্ণ বিচ মারিনার ওই প্রান্তে তখন আছড়ে পড়ছে ভারত মহাসাগর।সূর্যকিরণে তপ্ত বালুতট,শীতল হচ্ছে অবিরাম ঢেউয়ের স্পর্শে৷ দিগন্ত ছুঁয়েছে সাগর। মেরিনা বিচ-এ বেড়ানো ছাড়াও, একটা দিন চেন্নাইয়ের পথঘাট ঘুরে বেড়াতে মন্দ লাগে না।
পরদিনের বাসযাত্রার জন্য আগে ভাগেই টিকিট কেটে রেখেছি। গন্তব্য পণ্ডিচেরি। সকাল থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত চলে এই বাস সার্ভিস। দূরত্ব ১২৩ কিলোমিটার।
ইডলি আর সম্বর দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে, বসে পড়েছি বাসে। সামনের দিকেই সিট মিলেছে। শহরের কোলাহল ছাড়াতেই বিস্তীর্ণ ধানখেত আর নারকেলগাছে ঘেরা গ্রাম দেখতে দেখতে চলেছি। মাঝে মাঝে একটি করে জনপদ আসছে। মানুষজন বাজার করছেন। দক্ষিণী মেয়েরা মাথায় ফুল লাগিয়ে ঘুরছে পথেঘাটে। সেই বিশেষ ধরনের কমলারঙা ফুলও বিক্রি হচ্ছে রাস্তায়।
ঘন্টা চারেকের সফর শেষে নেমেছি পণ্ডিচেরি বাস টার্মিনাসে। এখান থেকে অটোতে পৌঁছোনো যায় পণ্ডিচেরি আশ্রম। কলকাতার শেকসপিয়র সরণির অরবিন্দ ভবন, মানে জুবিলি হাউস থেকে বুকিং করা ছিল পণ্ডিচেরি আশ্রমে থাকার জন্য। দুই শয্যার ঘর। সি সাইড গেস্ট হাউস-এ। তবে পণ্ডিচেরি সি বিচের ধারে আরও অসংখ্য হোটেল আছে। অনায়াসে জায়গা পেয়ে যাবেন। আর রেল স্টেশনের কাছে থাকতে চাইলে রয়েছে সরকারি ব্যবস্থায় গভর্নমেন্ট টুরিস্ট হোম।
অটো ভাড়া করে পণ্ডিচেরি ঘুরে ফেলা যায়। অথবা পণ্ডিচেরি টুরিজম-এর বাসে কন্ডাক্টেড টুরেও ঘোরা যায়। তবে এখানকার মূল আকর্ষণ অরবিন্দ আশ্রমটিই।
সি-বিচ ধরে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়বে শিশু উদ্যান, ওয়ার মেমোরিয়াল, গান্ধি স্কোয়ারের গান্ধিমূর্তি। আরও কিছুটা এগোলেই সমুদ্রের উপর লম্বা জেটি। বিচ-এ সানবাথ ও সমুদ্র স্নান দুই-ই চলে। এছাড়া আরও দেখার আছে রাজভবন, মিউজিয়াম, ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট, আর্ট গ্যালারি, বোট্যানিকাল গার্ডেন, অ্যাকোয়ারিয়াম এবং উস্টেরি লেক।
শান্তির খোঁজে যারা আসেন পণ্ডিচেরি তাদের খালি হাতে ফেরায় না। শ্রীমার আশীর্বাদধন্য অরোভিল-এ রয়েছে মাতৃমন্দির। এর কাছাকাছি কিচেন এবং ডায়নিং হল। বাইরে থেকে আসা লোকেরা এখানে খেতে পারেন ডোনেশনের বিনিময়ে বহু মানুষ ধ্যনমগ্ন হয়ে বসে আছেন ভিতরের হলঘরে। এক আশ্চর্য নিরবতার পরিবেশ চতুর্দিকে। আশ্রমিকরা নানা কাজে ব্যস্ত কিন্তু সম্পূর্ণ কোলাহল-মুক্ত পরিবেশ।
পরের দিনটার গন্তব্য ছিল চিদাম্বরম। পণ্ডিচেরি থেকে এর দূরত্ব মাত্রই ৬৪ কিলোমিটার। বাস মিলবে পণ্ডিচেরি বাস টার্মিনাস থেকেই। চিদাম্বরমের খ্যাতি এর নটরাজ মন্দিরের জন্য। মন্দিরের ছাদ সোনায় মোড়া। গ্রানাইট পাথরের এই মন্দির তৈরি হয়েছিল চোল সাম্রাজ্যের শাসকদের হাতে।
যদিও এই মন্দিরের খ্যাতি নটরাজের অর্থাৎ শিবের জন্যই কিন্তু মূল মন্দিরের দেবতা নিরাকার। মন্দিরের চারটি গোপুরম তৈরি হয়েছে দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্যশৈলী মেনেই। নটরাজ মন্দির সংলগ্ন গোবিন্দরাজ মন্দিরটিও ভারি সুন্দর। সাপের উপর শুয়ে আছেন বিষ্ণু এমনই একটি বিগ্রহ রয়েছে এখানে। সন্ধ্যায় আরতি হয়।
আমরা শহরের পথে অটো নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে দেখে নিলাম আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে গড়ে ওঠা ছিমছাম আন্নামালাইনগর। আর ১৮ কিমি দূরে পিছাভরম টুরিস্ট কমপ্লেক্স।
পরের দিনটি বিশ্রাম নেওয়ার পালা। তারপর রওনা দেব তিরুপতি দর্শনে।লম্বা সফরের মাঝে ২-৩টি দিন পণ্ডিচেরি ঘুরে যেতে মন্দ লাগবে না৷