কর্পোরেট মেক-আপ

কর্পোরেট জব-এর সঙ্গে যুক্ত এমন প্রতিটি মহিলারই মেক-আপ এমন হওয়া উচিত, যাতে কনফিডেন্স লেভেল ভরপুর মাত্রায় বজায় থাকে এবং স্মার্ট লুক চলে আসে।

কীভাবে করবেন মেক-আপ

সবার আগে ভালো করে ত্বক পরিষ্কার করে মুখে ময়েশ্চারাইজার মেখে নিন। পরে এসপিএফ-১৮ ফ্লুইড-যুক্ত টিন্ট লোশন লাগিয়ে নিন। ত্বকে দাগছোপ থাকলে কনসিলার প্রয়োগ করুন। বেস নিজের স্কিন টোন অনুযায়ী-ই ব্যবহার করুন সঙ্গে কমপ্যাক্ট পাউডার। ত্বকের রং ও টেক্সচারে সমতা আসবে।

আইজ মেক-আপ

কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড-এ নিজেকে প্রেজেন্ট করার জন্য স্মোকি-আইজ-ই পারফেক্ট। বাছুন ব্রাউন গ্রে শেড। পোশাকের সঙ্গে কনট্রাস্ট করে লাইনার লাগান। অ্যাইল্যাসেজ-এর উপর মাসকারা লাগাতে ভুলবেন না। তবে মাসকারা ওয়াটার-বেসড হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।

লিপ, চিক মেক-আপ

আপনি যদি ফ্রন্ট অফিস সামলান, ক্লায়েন্ট সার্ভিসিং করেন কিংবা এয়ার হোস্টেজ হন, সেক্ষেত্রে গ্লসি ডার্ক লিপস্টিক-ই যথাযথ আর চিক্স-এর উপর পিংক ব্লাশার একেবারে পারফেক্ট। তবে ব্লাশার ভালো করে স্মাজ করে নিতে ভুলবেন না। নয়তো অফিস বা অন্যান্য প্রফেশনের ক্ষেত্রে লাইট শেডের লিপস্টিক-ই মানানসই।

হেয়ারস্টাইল

স্মার্ট লুক পেতে পোশাক-আশাকের পাশাপাশি মেক-আপ যেমন জরুরি, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ হল হেয়ারস্টাইলও। কর্পোরেট সেক্টার-এর সঙ্গে যুক্ত মহিলাদের হেয়ারস্টাইলে নিট লুক থাকাটা জরুরি। সেক্ষেত্রে যাদের ছোটো চুল, তারা সামনের দিকের অর্ধেক চুল উপর দিকে তুলে পিন করে নিন, বাকিটা ঘাড়ের উপর খোলা ছেড়ে দিন। আর লম্বা চুলের ক্ষেত্রে উঁচু পনি-ই আদর্শ। ব্লেজার বা ফর্মাল ওয়্যারের সঙ্গে ফ্রেঞ্চ রোলও করতে পারেন।

কারেক্টিভ মেক-আপ

এই মেক-আপ মূলত অ্যাংকার, নিউজ রিডারদের জন্যই বেস্ট মনে করা হয়।

বেস নির্বাচন

প্রথমে ক্লিনজার দিয়ে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে নিন। তারপর ব্রাশ দিয়ে ত্বকে প্রাইমার লাগান। স্কিন টোন অনুযায়ী ডার্মা বেস কালার-ই নির্বাচন করুন। ডার্মা বেস-এর সঙ্গে কয়েকফোঁটা মেক-আপ ব্লেন্ড মিশিয়ে, লিকুইড ফর্মে আনুন। তারপর আঙুলের ডগার সাহায্যে ফোঁটা ফোঁটা আকারে পুরো মুখে লাগানোর পর ভালো ভাবে স্মাজ করে নিন। ডার্মা-র কালার যেহেতু একটু ডার্ক, ওটা দিয়ে কন্টুরিং করে নিন। এছাড়া ব্রাউন আইশ্যাডো দিয়েও কন্টুরিং করা যেতে পারে। শেষে ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার দিয়ে পাফ করে নিন।

আইজ মেক-আপ

আইশ্যাডো লাগানোর আগে আইশ্যাডো প্রাইমার একফোঁটা লাগিয়ে নিন। ব্রাশের বদলে হাত দিয়েই ব্লেন্ড করুন। তারপর এর উপর কপার অথবা গোল্ডেন ব্রাউন শ্যাডো লাগান। চোখের কোণার ঠিক উপরে ডার্ক ব্রাউন শ্যাডো লাগিয়ে ভিতর দিকে ব্লেন্ড করুন। আইব্রোর নীচে সিলভার অথবা গোল্ডেন হাইলাইটার দিন। ব্ল্যাক বা ব্রাউন পেনসিল দিয়ে আইব্রোজ প্রমিনেন্ট করে নিন। এরপর নিখুঁত ভাবে আইলাইনার লাগিয়ে নিন। যদি মনে করেন, কাজল পরতে পারেন নয়তো লাইনারও লাগিয়ে নিতে পারেন। চোখের শেপ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে কোনটা ব্যবহার করবেন। শেষে আইল্যাসেজ-এর উপর মাসকারার কোট লাগিয়ে নিন।

লিপ-মেক-আপ

ঠোঁটে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে আউটলাউন ব্রাশ অথবা পেনসিল দিয়ে ঠোঁট এঁকে নিন। তারপর লিপস্টিক দিয়ে ফিল করে দিন। মনে রাখবেন লিপস্টিক কখনওই খুব ডার্ক শেড বাছবেন না। ন্যুড লিপ মেক-আপও করতে পারেন।

চিক্স মেক-আপ

চিক্ বোন-এর উপর পিচ অথবা পিংক কালার লাগালে ভালো যাবে। স্ট্রোক সবসময় নীচ থেকে উপরদিকে হওয়া উচিত।

হেয়ারস্টাইল

অ্যাংকার বা নিউজ রিডারদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় চুল খোলাই রাখা হয়। এক্ষেত্রে স্ট্রেটনিং হেয়ার একেবারে পারফেক্ট। এই হেয়ারস্টাইল এখন ভীষণ ইন। চুল যদি কোঁকড়া হয় তাহলে ব্লো ডায়ার দিয়ে চুল ভালো ভাবে সেট করে নিন অথবা একটা লো-বান করুন।

পার্টি মেক-আপ

যদি পার্টি মেক-আপ নিয়ে কথা বলতেই হয় সেক্ষেত্রে শীতের মরশুমে সিলিকন বেস ফাউন্ডেশন দারুণ কার্যকরী। পারলে মিনারেল মেক-আপ প্রোডাক্ট-ই ব্যবহার করুন। কারণ এই সময় এমনিতেই আর্দ্রতার অভাবে ত্বক রুক্ষ হয়ে থাকে। ময়েশ্চারাইজার এর সঙ্গে ফাউন্ডেশন মিক্স করেও লাগাতে পারেন। ডার্কসার্কল থাকলে কনসিলার প্রয়োগ করুন। বেস এমনভাবে স্মাজ করুন যাতে ত্বক শাইন করে। সব শেষে ফেস পাউডারের হালকা পরত লাগিয়ে নিন মুখে। মেক-আপ-এর শুরু এবং শেষে ফেস মিস্ট অবশ্যই ব্যবহার করুন, এতে ত্বকের আর্দ্রতাও বজায় থাকবে আর মেক-আপ দীর্ঘস্থায়ীও হবে।

আই মেক-আপ

মুখের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চোখকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে গ্লিটারি বা মেটালিক আইশ্যাডো দারুণ। চোখের শেপ অনুযায়ী সরু বা মোটা করে কালারফুল লাইনার লাগান। চোখের ওয়াটার লাইন এরিয়ায় কাজল পরুন। চাইলে গোল্ড, ব্রোঞ্জ বা গ্রে মেটালিক শিমার লাগাতে পারেন। ডার্ক ব্রাউন অথবা ব্ল্যাক আইশ্যাডোর সাহায্যে স্মোকি-আইজ তৈরি করুন। অবশ্য ব্ল্যাক রং এড়িয়ে যেতে চাইলে মাল্টিকালার শ্যাডোও রাখতে পারেন পছন্দের তালিকায়।

লিপ কালার

ম্যাট কালারের লিপস্টিক-এর বদলে ঠোঁটে লাগান রেড ওয়াইন বা পিংক কালার। সকাল এবং রাতের মেক-আপ যেমন আলাদা, লিপস্টিকের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই। দিনে যেমন হালকা মেক-আপ যথাযথ তেমনি লিপস্টিকও হালকা মভ, পিংক রোজ রংই ডিমান্ড করে। রাতে একটু ডার্ক চলতেই পারে। এইসময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকায় ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, ঠোঁট ফাটে। তাই অনেকেই লিপগ্লসকেই বেছে নেয় ঠোঁট ফাটা থেকে মুক্তি পেতে। তাদের বলব, লিপগ্লসের পরিবর্তে ভিটামিন ই ভেলভেট, ক্রিম ম্যাট অথবা ময়েশ্চারাইজার যুক্ত লিপস্টিক-ই বাছুন সৌন্দর্য বজায় রাখতে।

চিক্ মেক-আপ

গালের সৌন্দর্য বাড়াতে শাইনিং ব্লাশার ব্যবহার করুন। পিংক শাইনিং ব্লাশার-ই বর্তমানে চলছে। চাইলে নর্ম্যাল ব্লাশার লাগিয়ে তার উপর শাইনিং-এর একটা কোট ব্লেন্ড করে দিন।

হেয়ারস্টাইল

মেক-আপের সঙ্গে সাজুয্য রেখে হেয়ারস্টাইল করুন যাতে পার্টির মধ্যমণি হয়ে উঠতে পারেন আপনি। সকলের চোখ যেন আটকে থাকে আপনার উপরেই। আজকাল তো হেয়ার স্ট্রেটনিং ভীষণ ভাবে ইন। লম্বা চুলে লেয়ারস্ ভালো যায়। সেক্ষেত্রে পিঠ পর্যন্ত চুল খোলা রাখলে যে-কোনও আউটফিটের সঙ্গেই ভালো যাবে। চুল কাঁধের নীচ অবধি অর্থাৎ মিডিয়াম সাইজের হলে, সেক্ষেত্রে প্রথমে বাঁ-সাইডে সিঁথি করে বাকি চুলটা ডানপাশে রাখুন। এবার বাঁ-সাইড থেকে সামনের দিকের কিছুটা অংশ নিয়ে বিনুনি করে পিন দিয়ে সেট করে নিন। ডানদিকের বাকি অংশ ভালো করে আঁচড়ে ছেড়ে রাখুন। কমবয়সিদের জন্য এটা বেশ ভালো হেয়ারস্টাইল। আরও একটা হেয়ারস্টাইল ট্রাই করতে পারেন। সমস্ত চুল ভালো ভাবে আঁচড়ে একপাশে নিয়ে আসুন। তারপর একটা রাবার ব্যান্ড দিয়ে পুরো চুল কভার-আপ করে নিন। টিনএজারদের এটা বেশ পছন্দের। চাইলে একটা খোঁপা করে তার চারপাশে মানানসই হেয়ার অ্যাকসেসরি লাগিয়ে নিতে পারেন। ফেঞ্চ নটও ট্রাই করে দেখতে পারেন।

ককটেল মেক-আপ

ফেস ক্লিন করে ক্রাইলন-এর আইভরি শেড লাগান। এটা অন্যান্য বেস-এর তুলনায় বেশ পাতলা। ব্রাশের সাহায্যে বৃত্তাকারে ঘুরিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন, পরে ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে ভালোভাবে স্মাজ করে নিন। ক্রাইলনের ০৭০ পিওর হোয়াইট ক্রিম বেস চিক্স-এর উপর ব্রাশের সাহায্যে ব্যবহার করুন। সাধারণত এটি হাইলাইটিং এরিয়াতেই প্রয়োগ করা হয়, যেমন – ফোরহেড আর চিক্স। তারপর ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন, যাতে শাইনিং এফেক্ট চলে আসে।

হোয়াইট আর পিংক টোন-এর ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগানোর পরে ফেস টোনার দিয়ে মুখে স্প্রে করুন। এতে মেক-আপ ওয়াটার প্রুফ হয়ে যাবে। তারপর পাউডার পাফ দিয়ে পাফ করে নিন। পরে আই মেক-আপ শুরু করুন।

আই মেক-আপ

আগের মতো একই উপায়ে চোখের কোণা থেকে ফিরোজা কালারের আইশ্যাডো লাগানো শুরু করুন। তারপর মাঝের অংশ বাদ দিয়ে বাকি অংশে পার্পল আইশ্যাডো লাগান। তারপর নিয়মমতো কাজল, মাসকারা, লাইনার এবং আইব্রোজ হাইলাইটিং করা তো আছেই। চোখের নীচে ওয়াটার লাইন এরিয়ার বাইরে ফিরোজা কালারের লাইনার লাগান। প্রথমে জেল লাগিয়ে পরে চোখের উপর নিউট্রাল সিমার লাগালে একটা ওয়েট লুক চলে আসবে।

লিপ মেক-আপ

অনেকগুলি শেডস মিলিয়েও আপনি লিপ মেক-আপ করতে পারেন। সবার আগে ঠোঁটে বেস কালার লাগিয়ে নিন। তারপর সিলভার কালারের পাউডার লাগিয়ে লিপ হাইলাইট করে নিন।

হেয়ারস্টাইল

ককটেল লুকের সঙ্গে হেয়ারস্টাইলও ডিফারেন্ট হওয়াটা জরুরি। প্রথমে ভালো করে চুল আঁচড়ে নিন। তারপর সামনের পোরশনের খানিকটা চুল নিয়ে ব্যাককোম্ব করুন। এতে ওই পোরশনের চুলে একটা ফ্লাফি লুক চলে আসবে। তারপর বাকি অংশের সমস্ত চুল একসঙ্গে নিয়ে দুই কানের মাঝামাঝি ঠিক মাথার উপরি অংশে সেট করুন। শক্ত করে চেপে রেখে খানিক চুল বার করে রাবার ব্যান্ডের বদলে চুল দিয়ে পেঁচিয়ে নিন। তারপর পিন দিয়ে এমন ভাবে সেট করুন যাতে চুল খুলে না যায়। ককটেল পার্টির জন্য এটা দারুণ।

মিনারেল মেক-আপ

মিনারেল মেক-আপকে ন্যুড-মেক-আপও বলা হয়ে থাকে। এই মেক-আপের জন্য প্রথমে রুটিন সিটিএম (ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং) করে নিন। তারপর প্রাইমার লাগিয়ে নিন। যদি কোনও পার্টিতে যাওয়ার থাকে, তাহলে শাইনিং স্টোক ক্রিম প্রাইমার-ই লাগান। ডার্কসার্কল থাকলে কনসিলার ব্যবহার করুন। ডিপ ডার্কসার্কল থাকলে অরেঞ্জ কনসিলার-ই আদর্শ। পরে বেস লাগান। ক্রাইলনের বেস ৬২৬ সি ও বি একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে ব্লেন্ড করে নিন। গ্লোয়িং উজ্জ্বল ফেয়ার লুক পেতে ক্রাইলন এর পি-৫ ডার্মা লুজ পাউডার অ্যাপ্লাই করতে পারেন। ব্রাশের সাহায্যে এক্সট্রা পাউডার ঝেড়ে ফেলুন।

আই মেক-আপ

প্রথমে চোখের পাতায় লুজ পাউডার লাগিয়ে নিন। ক্রাইলন-এর র‍্যাম্বও শেড-এর থেকে গোল্ডেন শেড বেছে নিন। আইব্রোর ঠিক নীচে গোল্ড আর সিলভার কালার মিক্স করে লাগান। আই পেনসিল দিয়ে লাইনার লাগানোর পর পেনসিল দিয়ে ওয়াটার লাইন এরিয়ায় সুন্দর করে রেখা টেনে নিন। তারপর মাসকারার কোট, শেষে লিপস্টিক, ব্যস মেক-আপ কমপ্লিট।

হেয়ারস্টাইল

খোলা চুল সব মেক-আপের সঙ্গেই সমান ভাবে মানানসই। তবে এই হেয়ারস্টাইলটি ট্রাই করে দেখতে পারেন। চুল ভালো ভাবে আঁচড়ে বাঁ-সাইড থেকে একটা বিনুণি এবং ডান সাইড থেকে একটা বিনুণি বানিয়ে মাথার মাঝামাঝি অংশে নিয়ে এসে একটা রাবার ব্র্যান্ড দিয়ে দিন। বাকি চুল খেজুর চোটি বা ফ্রেঞ্চ প্ল্যাট করে নিন। সকলের চোখ আপনার উপরেই থাকবে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...