মাকড়সার জালের মতো নদী-খাল-খাঁড়ির আয়ত্বে সুন্দরবন যেন প্রকৃতির এক আশ্চর্য জগৎ। মোট বনভমির ৩১.১ শতাংশ জুড়ে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল।
মাতলা নদী
ঠাকুরানি, মাতলা, বিদ্যাধরী, কালিন্দী, রায়মঙ্গল এই পাঁচটি প্রধান নদী এবং হোগল, দুগ্গাদোয়ানি, হেড়েভাঙা, নেতিয়া, হরিণডাঙা, ন-বাঁকি, তেরো বাঁকি, গোসাবা এমনতর বহু নদী, শাখা নদী তারপরও খাল, পাশখাল, সুতখাল, খাঁড়ি, জল ও জঙ্গল মিলেমিশে একাকার সুন্দরবন। কোথাও নদীসঙ্গম এতটাই চওড়া যে, এপার ওপার কিছুই দেখা যায় না।
Sundarban হল বঙ্গোপসাগর উপকুলবর্তী প্রশস্ত বনাঞ্চল। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নদী। প্রবাহ পথে নদীটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। একটি প্রবাহ কুলতলি গরানবোস হয়ে সুন্দরবন গেছে, অন্য প্রবাহটি বাসন্তি, পাঠানখালি, সূর্যবেড়িয়া হয়ে বিদ্যাধরী নদীতে গিয়ে মিশেছে।
সবুজের অফুরন্ত সমারোহে অনন্ত বনভূমি আর মাকড়সার জালের মতো নদী-খাল-খাঁড়ির আয়ত্বে সুন্দরবন যেন প্রকৃতির এক আশ্চর্য জগৎ। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ জুড়ে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল। লোনাচরের দ্বীপগুলি নিবিড় সবুজে ছয়লাপ। গরান, গর্জন, গেঁওয়া, বাইন, কেওড়া, ওড়া, কাদড়া, ধোন্দল, গিলে, আমুড়, হিঙে, ভাদাল, হেতাল, সুন্দরী, খলসি, ডোরা, হরকোঁচা, গোলপাতা ইত্যাদি গাছগাছালির বাতাবরণে ছাওয়া বাদাবন আর নদীনালার বেষ্টনীতে বাঁধা এই সুন্দরবন। যদিও সুন্দরী গাছের আধিক্যের জন্যই একসময় এই জায়গার নাম হয়েছিল সুন্দরবন। শোনা গেল, ইদানীং নাকি সুন্দরী গাছের সংখ্যা অন্যান্য গাছের তুলনায় কিছুটা কমে এসেছে।
সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। প্রায় ১,৩৩০.১২ বর্গকিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে। ১৯৭৩ সালে পশ্চিমবাংলার মূল এলাকাটি সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প হিসাবে ঘোষিত হয়। ১৯৯৭ সালে প্রাকৃতিক সম্পত্তি হিসাবেইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবনকে জালের মতো জড়িয়ে রেখেছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কর্দমাক্ত চর, ম্যানগ্রোভ বনভূমি।
দুগ্গাদোয়ানী নদী, গোসাবা
এমভি চিত্ররেখা নামের পেল্লাই বজরার আপার ডেকে আধশোয়া হয়ে জলভ্রমণ, নিজেকে কেমন জমিদার গিন্নি মনে হচ্ছে। মন পড়ে আছে জঙ্গলের ওপারে। অদ্ভুত মায়াময়, রোমাঞ্চকর। প্রচুর গাছপালা-শিকড়-ঝুরি-আলো-আঁধারি। দিগন্তব্যাপী বিস্তৃত জলরাশি।
সহযাত্রী পর্যটকদের সঙ্গে টুকরো আলাপচারিতার মাঝেই জলযানের ডেকের খাবার জায়গায় বসে খাওয়াদাওয়া, রবীন্দ্রসংগীত ও গল্পগুজব। এক রাত দুদিনের একটুকরো নিপাট ছুটির অবসরে আর কী চাই! চোখের আঙিনায় অনন্ত জলরাশি ও বাদাবনের ঝোপঝাড় সমৃদ্ধ সুন্দরবনের বর্ণময় সবুজ প্রকৃতি। জলে নরম রোদের বিচ্ছুরণ। রাতে নদীর বুকে চাঁদের কারসাজিতে ইতস্তত কিছু জলের বর্ণমালা। জলবাসরের আবেগে মাতোয়ারা রাশ আলতো করে ছেড়ে দিই। ফিরতি পথে মন কেমন করা ক্রমশ ফিকে হয়ে আসা গভীর আরণ্যের স্মৃতি মনকে ভরে তোলে সব পাওয়ার আবেশে!
কীভাবে যাবেন : কলকাতা থেকে নানা ভাবে সুন্দরবন যাওয়া যায়। তবে ক্যানিং এবং সোনাখালি বা বাসন্তী থেকে সুন্দরবন যাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
কী দেখবেন : Sundarban কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে যে-সমস্ত দ্বীপে যাওয়ার ছাড়পত্র মেলে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সজনেখালি, সুধন্যখালি, পাখিরালয়, পিরখালি, চোরাগাজিখালি, দোবাঁকি, বুড়ি ডাবরি, ঝিঙাখালি, নেতিধোপানি, মরিচঝাঁপি। নদীগুলিতে কুমির, কামটের সংখ্যা প্রচুর। জঙ্গলে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর দেখা মিলবে।
কোথায় থাকবেন : সুন্দরবন ভ্রমণের চিরাচরিত প্রথা হল সারাদিন লঞ্চে ঘুরে রাত্রিবাসও লঞ্চে। বর্তমানে রাত্রিবাসের জন্য অনেকগুলি হোটেল, ক্যাম্প, বনবাংলো হয়েছে।