সেক্স শুধু শারীরিক গতিবিধির উপর নির্ভর করে না, এর সঙ্গে মানসিক যোগও থাকে নিবিড় ভাবে। তাই, আর্থিক চিন্তা ইমোশন কমিয়ে দিয়ে সেক্স-লাইফ-এ বিঘ্ন ঘটায়। কারণ, চিন্তায় ডুবে থাকা মন সম্পূর্ণ শরীরকে সঙ্গ দেয় না। এর ফলে শরীরে উত্তেজনা আসে না ঠিক ভাবে। আর শরীরী আনন্দের এই ঘাটতি শুধু স্বামী-স্ত্রীর জীবনে কুপ্রভাব ফেলে না, এতে পারিবারিক জীবনেও স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়। আর খারাপ যৌনজীবন স্বামী-স্ত্রীর সাধারণ শারীরিক কার্যক্ষমতাও হ্রাস করে।
অবশ্য শুধু আর্থিক চিন্তা-ই নয়, সবরকম মানসিক চাপের কুপ্রভাব পড়ে সম্ভোগক্রিয়ায়। কোনও বিষয়ে সঠিক মনোনিবেশ না করলে সেই কাজ যেমন ত্রুটিমুক্ত হয় না, এক্ষেত্রেও একই অবস্থা হয়। আর এ কথা সত্যি যে, অন্যান্য চাপের থেকে আর্থিক চাপ মনকে বেশি ভারাক্রান্ত করে।
আর্থিক ঘাটতির ফলে অনেককিছু থেকে বঞ্চিত হতে হয় পরিবারের সবাইকে। কোনও ভালো উপহার দেওয়া কিংবা বেড়াতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না পর্যাপ্ত টাকার অভাবে। এর ফলে মনখারাপ থাকে এবং শরীরী মিলনের সময় মনে আনন্দের ঘাটতির কারণে মনোসংযোগে বিঘ্ন ঘটে। আর মনের যোগ ঠিক মতো না থাকলে পরিপূর্ণ আনন্দ পাওয়া যাবে না, এটাই স্বাভাবিক। কোভিড পরিস্থিতিতে এই আর্থিক চিন্তা এবং সবরকম মানসিক চিন্তা কমবেশি গ্রাস করেছে সিংহভাগ মানুষকে। কেউ এখন কর্মহীন, কেউ কাজ করছেন কম বেতনে, কিছু মানুষ সময়ে বেতন পাচ্ছেন না এমন আরও নানারকম অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে মানুষ।
বিভিন্ন সংস্থা নানা অজুহাতে কর্মীদের প্রাপ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে চলেছে এবং তারা চাইছে কর্মীরা যাতে চাকরি ছেড়ে চলে যায়। আর এই আর্থিক চাপ এতটাই মানসিক বিপর্যয়ে ফেলেছে যে, স্বামী-স্ত্রী স্বাভাবিক শরীরী সুখ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এর ফলে সম্পর্কের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হচ্ছে এবং মানসিক হতাশা গ্রাস করে চলেছে।
সামাজিক জীবনে পড়ছে কুপ্রভাব
আর্থিক দুরাবস্থার কারণে অনেকে শহর ছেড়ে গ্রামে বসবাস করছেন কিংবা বড়ো বাড়ি বিক্রি করে ছোটো বাড়ি কিনছেন কিংবা ভাড়াবাড়িতে থাকছেন। বড়ো স্কুল থেকে ছাড়িয়ে কম ফিজ-যুক্ত ছোটো স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করতেও বাধ্য হচ্ছে অনেক অভিভাবক। আর এর ফলে সামাজিক মান এবং সম্মান বজায় রাখতে অসুবিধা হচ্ছে খুব স্বাভাবিক ভাবে। এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে মানসিক ভাবে বেশি ভেঙে পড়ছেন বাড়ির মহিলারা। তাই সম্ভোগকালীন শরীর-মন ঠিক ভাবে সাড়া দিচ্ছে না তাদের। এক্ষেত্রে স্বামী স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখতে চাইলেও, মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন স্ত্রী।
উপার্জন বাড়াতে অনেকে আবার বেশি পরিশ্রম করছেন এবং শারীরিক ক্লান্তিতে সারারাত ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন। অনেকে আবার ক্লান্ত না থাকলেও, কাজের চাপে সময় দিতে পারছেন না সঙ্গীকে। এর ফলে শরীরী সুখ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্বামী-স্ত্রী উভয়ে। আর দীর্ঘদিন শরীরী সুখের অভাবে মেজাজও ঠিক থাকছে না কারওর, খিটখিটে হয়ে উঠছেন ক্রমশ। এই অসহিষ্ণুতা কুপ্রভাব ফেলছে সামাজিক জীবনে। বন্ধু, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দূরভাষে বাক্য বিনিময় করতেও ইচ্ছে করছে না এবং সামাজিক সম্পর্কে দূরত্ব বাড়ছে।
বাড়ছে শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল এই যে, একটি সমস্যা তৈরি হলেই আরও পাঁচটা সমস্যাও সঙ্গী হবে তখন। কারণ, একটি সমস্যার সঙ্গে অন্য সমস্যার যোগসূত্র আছে এবং একটি সমস্যা খুব সহজ ভাবে অন্য সমস্যার জন্ম দেয়। এই যেমন আর্থিক চিন্তা সেক্স-লাইফ নষ্ট করে এবং সেক্স-লাইফ নষ্ট হলেই শরীর স্বাভাবিক ছন্দ হারাবে। এর ফলে মাথা যন্ত্রণা বাড়বে। বেশি চিন্তায় কম ঘুম হতে পারে এবং ঘুম কম হলেই খাবার হজম হবে না ঠিকমতো। ফলে অচিরেই পেটের সমস্যা শুরু হয়ে যাবে। আর পেটের সমস্যা শুরু হলেই আরও নানারকম রোগ বাসা বাঁধবে শরীরে। চুল পড়তে শুরু করবে, গ্যাসট্রিক, আলসার এমনকী রক্তে বাড়তে পারে শর্করার পরিমাণ এবং উচ্চ রক্তচাপের শিকারও হতে পারেন।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই যে, শরীর-মন সুস্থ না থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমবে শরীরে। আর এই করোনা সংক্রমণের আবহে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া মানেই সমূহ বিপদ! কারণ, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করার ক্ষমতা শরীরে কমলে সহজে রোগমুক্তি সম্ভব নয় এবং জীবনহানির সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে। আর মনে রাখবেন, শরীরে করোনার ব্যাপক প্রভাব এবং স্ট্রেস হরমোন বেড়ে গেলে শরীর নিস্তেজ থাকবে সর্বদা এবং যৌন উত্তেজনা কমে যাবে। আর যৌন উত্তেজনা কমে যাওয়া মানেই, এর কুপ্রভাব সুদূরপ্রসারি। ছেলেদের শুক্রাণু উত্পাদন কমবে এবং সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম হতে পারেন। আর শরীরে সেক্স হরমোনের রিলিজ কমে গেলে মহিলাদের মেনোপজ হয়ে যেতে পারে সময়ে আগে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন শরীরের যৌন খিদে না মিটলে অকাল বার্ধক্য, এমনকী মানসিক ভারসাম্যও নষ্ট হতে পারে।
মুক্তির উপায়
যদি আর্থিক সংকট দেখা দেয়, তাহলে প্রথমে আয় বাড়ানোর পথ খুঁজুন। আর তা যদি দ্রুত সম্ভব না হয়, তাহলে খরচ কমানোর চেষ্টা করুন। যেসব খাতে অতিরিক্ত খরচ করতেন, সেইসব ব্যয় কমাবার চেষ্টা চালিয়ে যান। যেমন এসি কম চালিয়ে কিংবা না চালিয়ে এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কম ব্যবহার করে বিদু্যতের খরচ কমান। সব ঘরে আলো-পাখা না চালিয়ে সম্ভব হলে বেশিরভাগ সময় একই ঘরে থাকুন, এতে বিদু্যত্ সাশ্রয় হবে। কমাতে পারেন রান্না-খাওয়ার খরচও। ডিম, সোয়াবিন প্রভতি পুষ্টিকর অথচ অপেক্ষাকৃত কম দাম, তাই মাছ মাংস খাওয়া কমিয়ে এসব খাবার খেতে পারেন। সাধারণ বাস-ট্রামে যাতায়াত করেও খরচ কমিয়ে নিতে পারেন অনেকটাই। বাড়িতে কাজের লোক কমিয়ে কিংবা না রেখে সম্ভব হলে নিজে কাজ করুন, এতে খরচ কিছুটা কমবে। ধূমপান এবং মদ্যপানের নেশা থাকলে এই আর্থিক দূরাবস্থার অজুহাতে ছেড়ে দিন মনকে শক্ত করে। এর ফলে অনেক টাকা বাঁচবে এবং আপনার সু-স্বাস্থ্যও পুনরুদ্ধার হবে।
স্বামী-স্ত্রী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে খরচ কমানোর চেষ্টা করুন। একজনের মন খারাপ হলে অন্যজন তাকে বোঝান যে, এই আর্থিক দুরাবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হবে না, কেটে যাবে। প্রয়োজনে বাড়ির সব কাজ ভাগাভাগি করে করুন এবং আনন্দে থাকার চেষ্টা করুন। দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া সম্ভব না হলেও, মন খারাপ না করে আশেপাশে একসঙ্গে হাঁটুন, এতে শরীর-মন দুই-ই ভালো থাকবে।
একঘেয়েি কাটাতে স্ত্রী-কে মাঝেমধ্যে বাপেরবাড়ি ঘুরে আসতে বলুন। বন্ধু-আত্মীয়দের সঙ্গে মাঝেমধ্যে দূরভাষে কথা বলে মন হালকা করুন। যাদের শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করেন, তাদের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা আলোচনা করে খুশি থাকুন। অবসর সময়ে বাড়ির সবাই বসে আড্ডা দিন, টিভিতে সিনেমা দেখুন। ব্যস্ত থাকতে পারেন আঁকা, লেখা, পড়াশোনা, গানশোনা অথবা গার্ডেনিং-এ। আর শরীর-মন ভালো রাখতে প্রতিদিন অবশ্যই যোগ ব্যায়াম করুন। সেইসঙ্গে, শরীরী মিলনের আগে থেকে মন থেকে আর্থিক চিন্তা সরিয়ে রেখে খুশি থাকুন অবশ্যই।