কখনও ভেবে দেখেছেন কি, আগেকার দিনগুলিতে মানুষ এতো এককীত্বে ভুগতো না৷ছোটো থেকেই শিশুরা যুক্ত থাকত খেলাধুলোয়৷ কত রকম অ্যাক্টিভিটি এবং তার প্রত্যেকটিই শিশু-কিশোর বয়সের নির্মল আনন্দের জন্য৷ প্রফেশনের আরও একটি অপশন হিসেবে এক্সট্রা ওপেনিং করে রাখার জন্য, তখনকার দিনে মা বাবারা এটা ওটা এক্সট্রা কারিকুলার- এর কথা ভাবতেন না৷ বর্তমানে তাই চাপ থেকে মুখ ফেরাতে ফেরাতে শিশুরা হয়ে ওঠে পলায়ন প্রবৃত্ত৷ কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি হতে ভয় পায়৷এটাকেই বোধহয় বলে New generation Crisis৷
বড্ড খেলো কম্পিটিশন-এর মুখে আমরা ওদের ছুড়ে দিয়েছি৷ ছোট্ট ঘর, পারিবারিক উষ্ণতা, প্রিয়জনদের ভালোবাসা, তার সঙ্গে কিনা গোটা জগতের তুলনা! তাইতো আমাদের সন্তানরা গোটা জগতটাকেই পকেটে পুরে ফেলেছে৷ যতক্ষণ বাড়িতে থাকছে মন পড়ে আছে বাইরেই৷ এসএমএস, ফেসবুক, ট্যুইটার, চ্যাটের মাধ্যমে তারা ভার্চু্য়াল জগতে অলীক আনন্দ ও শান্তিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে৷
আর আমাদের প্রজন্ম যারা ওদের হাতে এই টেকনোলজি তুলে দিয়েছি তারা ওদের থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্৷ ওরা তাই যেন রাজার মতো জীবনযাপন করেও অতিবড়ো ভিখিরি হয়ে গেছে৷ ভালোবাসার কাঙাল৷ অচেনা মানুষের স্নেহপ্রার্থী৷ ভার্চু্য়ালিটি থেকে বিচ্ছিন্ন হলেই ইনসিকিওরড বোধ করে৷হতাশা থেকে বেছে নেয় Suicide –এর পথ৷
নাহ্! তবু আমরা নিজেদের দোষী বলতে নারাজ৷ বাইরের স্টিমুলাসগুলি এত আকর্ষণীয় যে আমার সন্তানকে চুম্বকের মতো টেনে নিয়ে যাচ্ছে৷আর ওই ম্যাগনেটিক অ্যাট্রাকশনের সামান্য বিচ্যুতিতেই আমার সন্তানের ভবিষ্যতে নেমে আসছে কালো আঁধার৷সময় হয়েছে ভুল শুধরোবার৷
নতুন বছর মানেই নতুন একটা শুরু। এসে গেল ২০২২ । আনকোরা একটা বছর ঢুকতেই তাই প্রার্থনা আর প্রত্যাশা, দুই-ই জায়গা করে নিয়েছে মানুষের মনে। একটা নতুন শুরু কি করা যায় না ২০২২-এ? কিন্তু তার আগে কিছু ভুল শুধরে নেওয়া দরকার৷ রইল Relationship tips for new year৷ এগুলি আপনার এবং আপনার সন্তান, উভয়ের ক্ষেত্রেই জরুরি৷
তবে প্রথমেই বলে রাখা ভালো যে, সামান্য মন খারাপ এবং বিষণ্ণতাকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়৷ কারণ দুটো এক নয়৷ মস্তিষ্কের বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটারের তারতম্যের ফলস্বরূপ বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সকলেই আমরা বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হতে পারি৷ এমনকী এই সব নিউরোট্রান্সমিটারের সামান্য রাসায়নিক ওলোটপালটের ফলে আপনার দুধের শিশুটিও হতে পারে বিষণ্ণ৷ যথাযথ চিকিত্সা, সামান্য ওষুধ, সহমর্মীতা, পরিবারের সাহচর্য তাকে করে তুলতে পারে মেইনস্ট্রিম৷ আটকানো যেতে পারে কোনও ভয়াবহ পরিণতি৷
বন্ধু চিনতে শেখা : নতুন বছরে সেই বন্ধুদের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখুন যারা আপনার প্রকৃত বন্ধু। বন্ধুত্বের মুখোশ পরে যারা আপনার ক্ষতি করে, সেই সমস্ত মানুষকে জীবন থেকে বাদ দিয়ে দিন। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধুদের তালিকা থেকেও ঘনিষ্ঠজনদের রেখে, বাকিদের ছেঁটে ফেলুন।
বিশ্বাসঘাতকতা : যে বা যারা আপনার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে, তাদের চিনে নিন। আপনার ভালোমানুষির সুযোগ নিতে দেবেন না আর তাদের। ছোটোখাটো বিশ্বাসভঙ্গের ঘটনা, বন্ধুত্বে সয়ে নেওয়া যায় কিন্তু কারও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে যদি আপনাকে চরম মূল্য দিতে হয়, তাহলে সচেতন ভাবে সেই ব্যক্তির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করুন।
স্ট্রেস শেয়ারিং : মনের উদ্বেগ, স্ট্রেস কিংবা দুশ্চিন্তা যেটাই থাকুক না কেন, একা একা মনের চাপ না নিয়ে বিশ্বস্ত কারও কাছে খুলে বলুন মনের কথা। হয়তো এতে সমস্যার সমাধান করাও সহজ হবে। পরস্পরের সমস্যাকে বোঝার ও গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করুন। তাহলে দেখবেন মনের চাপ অনায়াসে কমে যাবে৷
বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা : খোশ মেজাজে থাকুন। ইট ড্রিংক অ্যান্ড বি মেরি। আড্ডা জীবন থেকে হারিয়ে যেতে দেবেন না। ওয়ার্ক স্ট্রেস অনেকটাই কমে যায়, প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে মন খুলে আড্ডা দিলে। মহামারির ভয়াবহতা কাটিয়ে নতুন করে বাঁচার কথা ভাবুন। নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা ক্লান্ত৷ আসুন, একটা বন্ধুত্বপূর্ণ বাতাবরণ তৈরি করি৷