বিয়ে মানেই সুন্দর পবিত্র একটি সম্পর্কের গোড়াপত্তন। এই সম্পর্ক আরও সুন্দর হয়ে ওঠে যদি নবদম্পতি শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে সুস্থ থাকেন। কীভাবে নিতে হবে যত্ন শরীর এবং মনের, তাই নিয়ে আজ আমাদের আলোচনা…

শারীরিক প্রস্তুতি

বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর শারীরিক প্রস্তুতি নেওয়া খুবই গুরত্বপূর্ণ। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে পড়ে উভয়ের মেডিকেল চেকআপ, রক্তের গ্রুপ যাচাই, বংশগত কারও কোনও রোগ আছে কিনা দেখে নেওয়া, উভয়ের বয়স, এছাড়াও রক্তের সম্পর্কে আত্মীয়ে মধ্যে Marriage হচ্ছে কিনা সেটাও দেখে নেওয়া। এগুলোর সবকটিই প্রযোজন ভবিষ্যত্ জীবনে দাম্পত্যকে আরও সুমধুর করে তুলতে।

এবার Marriage দিনটির জন্যও উভয়েই কিছু প্রস্তুতি দরকার হয়। বিয়ের দিনে কনের সৌন্দর্যে আলাদা মাত্রা যোগ করতে শরীরেরও কিছু যত্নের প্রযোজন পড়ে। বিয়ের দিনে অতিথিদের দৃষ্টি থাকে বর-কনের উপরেই। তাই কনের নিজেকে আকষর্ণীয় করে তুলতে দরকার বিয়ের আগে থেকেই বিশেষ পরিচর্যার।

সাম্প্রতিক সময়ে বিয়ের আযোজনের অনেকটাই দাযিত্ব থাকে বর-কনের উপর। বিয়ের শপিং, বিয়ে এবং অতিথিদের অভ্যর্থনার সব আয়োজন করা, প্ল্যানিং, জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর আগের মানসিক দ্বিধাদ্বন্দ্ব, ভীতি সবকিছুই চাপ সৃষ্টি করে পাত্র-পাত্রীর উপর। ফলে টেনশন, পরিশ্রম চেহারায় ফেলে ক্লান্তির ছাপ। চোখের নীচে কালি পড়ে, মুখের এবং চামড়ার উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়। অনেকেই ত্বক নিয়ে সমস্যায় পড়েন। সুতরাং নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে ত্বকের যত্নের পাশাপাশি কয়েক মাস আগে থেকেই পুরো শরীরের যত্ন নেওয়া শুরু করে দিতে হবে। পার্লারে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়িতেও আপনি ত্বক, চুল, হাত-পায়ে এবং মুখের যত্ন নিতে পারেন।

ত্বকের যত্ন

(ক) ত্বকের আর্দ্রভাব ধরে রাখতে পারলে তবেই ত্বক হয়ে উঠবে সতেজ এবং সুন্দর। ত্বকের প্রাণোচ্ছল টাটকা টানটান ভাব ধরে রাখতে সারাদিনে প্রচুর জল পান করুন এবং টাটকা ফল খান।

(খ) ক্লিনজার দিয়ে সারাদিনে দুবার মুখ পরিষ্কার করুন। তারপর মুখ শুকিয়ে গেলে টোনার ব্যবহার করুন। সবথেকে শেষে ত্বকে ভালো করে মযে্শ্ছারাইজার লাগিয়ে নিন।

(গ) ত্বকের মরা কোশ ঝরিয়ে ফেলতে ২ টেবিল চামচ ওটমিল ও অ্যালোভেরা জেল, ২চা চামচ চিনি এবং সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে সারা মুখে এবং ত্বকের খোলা অংশে লাগিয়ে নিন। ত্বকে ৫-৭ মিনিট রেখে ভিজে হাতে ত্বকে মাসাজ করুন এবং হালকা গরমজলে রগড়ে পুরোটা ধুয়ে ফেলুন। প্রতি সপ্তাহে প্রক্রিয়াটি ত্বকে প্রযোগ করলে ত্বকের মরা কোশ দূর হয়ে যাবে।

পেডিকিওর-ম্যানিকিওর

হাতের এবং পায়ের নখ পছন্দমতন কেটে শেপ দিন এবং নখের উপর ক্রিম লাগিয়ে রাখুন। এবার একটি বড়ো গামলায় গরমজল নিন এবং তাতে শ্যাম্পু, লবণ এবং লেবুর রস মিশিয়ে হাত ও পা ওই জলে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন। এরপর তোয়ালে দিয়ে হাত-পা ভালো করে মুছে মযে্শ্ছারাইজার লাগান।

চুলের যত্ন

ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে খুব সহজেই চুলের যত্ন নিতে পারেন। সপ্তাহে তিনদিন একটি করে ডিম মাথার ত্বক ও চুলে লাগিয়ে আধঘণ্টা রেখে চুল ধুয়ে নিতে পারেন। টাটকা অ্যালোভেরা জেল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে রেখে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে পারেন। বিয়ের তিন-চার মাস আগে থেকেই এই পরিচর্যা শুরু করে দিতে পারেন। এছাড়াও সপ্তাহে ২-৩দিন নারকেল দুধের সঙ্গে নিমপাতাবাটা ও পাতিলেবুর রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করেও চুলে লাগালে উপকার হবে। সবশেষে কাঁচা দুধে মধু মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

যদি মনে করেন চুল রুক্ষ হয়ে পড়ছে, চুল স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারাচ্ছে তাহলে ১ চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে ১ চামচ ক্যাস্টর অয়েল, ১ চামচ ভিনিগার, এক চামচ শ্যাম্পু, ১ চামচ মধু ও একটি পাকাকলা মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে চুলে লাগান। ভিনিগারের বদলে পাতিলেবুও ব্যবহার করতে পারেন। আধঘন্টা চুলে লাগিয়ে রেখে চুল ভালো করে জল দিয়ে ধুয়ে নিন। তবে মনে রাখতে হবে প্যাকটি লাগাবার আগে চুলে ভালো করে তেল লাগিয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে তিনদিন এই প্রক্রিয়াটি মেনে চললে উপকার পাবেন।

পার্লারে গিয়ে যারা ফেসিয়াল ও হেয়ার স্পা করাতে ইচ্ছুক থাকেন তাদের জেনে রাখা ভালো বিয়ের তিনমাস আগে থাকতেই এটা শুরু করে দেওয়া উচিত। সাধারণত ত্বক পরীক্ষা করে ভালো পার্লারগুলিতে ফেসিয়াল করা হয়। বিয়ের আগে তিনবার ফেসিয়াল করলেই যথেষ্ট। তবে শেষেরটা বিয়ের ১ সপ্তাহ আগে হতে হবে। হেয়ার স্পা-এর ক্ষেত্রে বিয়ের আগে দুবার হেয়ার স্পা অবশ্যই করানো উচিত। ১৫দিন আগে একবার হেয়ারকাট করিয়ে নেবেন। শারীরকে রিল্যাক্স রাখতে বডি মাসাজ বা অ্যারোমা থেরাপি নিয়ে নিতে পারেন। এছাড়াও নিয়ম করে ডায়েট চার্ট মেনে খাওয়াদাওয়া করুন। রেগুলার এক্সারসাইজ, যোগ ব্যায়াম করুন শরীর ফিট রাখতে। মেডিটেশন করতে পারলে বিয়ের সময় সুফল পাবেন, শরীর মন স্ট্রেস ফ্রি থাকবে। এছাড়া জল, টাটকা ফল-সবজি ডায়েটে রোজ রাখলে ত্বকের গ্লো স্বাভাবিক ভাবেই বাড়বে।

বিয়ের এক সপ্তাহ আগেই ওয্যাক্সিং এবং আইব্রো করিয়ে নিতে হবে যাতে ত্বকে র‌্যাশ বেরোলেও ৭দিনের মধ্যে তা মিলিয়ে যায়।

শারীরিক প্রস্তুতির সঙ্গে কনের মানসিক প্রস্তুতিও দরকার।

বিয়ে মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিবাহিত জীবনে পথচলার সময়টাও দীর্ঘ। তাই বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর একে অপরকে ভালো করে জেনেবুঝে নেওয়া দরকার।

লভ ম্যারেজ বা অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ উভয় ক্ষেত্রেই পাত্র-পাত্রীকে সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। দুজনেরই পরস্পরের পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলারও মানসিকতা থাকা দরকার। সঙ্গীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে নিজের স্বাধীনতা কমে যাবে এ ধারণা থাকা ভুল। সঙ্গীকে যখন জীবনসঙ্গী করেছেন তখন তার ভালোর সঙ্গে সঙ্গে দোষত্রুটিকেও মেনে নিতে হবে, তার সমস্যা মেটানোর দাযিত্বও আপনাকে আন্তরিকতার সঙ্গে নিতে হবে। তাই সংসার নিয়ে হতাশামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।

প্রত্যেক পরিবারের নিয়মকানুন, রীতিনীতি সবকিছুই আলাদা আলাদা। তাদের আচার ব্যবহারও আলাদা। এই ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে উভয়কেই সহযোগিতাপরায়ণ হতে হবে। নিজের পরিবার ও সমাজের প্রতি দাযিত্ববান হতে হবে এবং নিজের স্বভাবের নেতিবাচক দিকগুলি সংশোধন করার চেষ্টা করতে হবে। দুটো পরিবারের পারস্পরিক আলোচনার মধ্যে দিয়ে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের মাধ্যমেই দুটো পরিবার কাছাকাছি আসবে এবং এতে সবথেকে বেশি সুফল পাবে বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে চলা নতুন যুগলটি।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...