আজকাল বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীতেই দেখা যায় ফলের ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই ফলকে শুধুমাত্র টেবিলের শোভা বাড়ানো বা খাবারের সামগ্রী হিসাবে না রেখে, যদি প্রকৃতিকে সঙ্গে করে সরাসরি রূপচর্চার কাজে ব্যবহার করা যায় তাহলে কেমন হয়! আজকাল শহরের বহু নামিদামি পার্লারেও ফলকে সৌন্দর্যবৃদ্ধির কাজে লাগানো হচ্ছে।
এখন গ্রীষ্মকাল। আর গ্রীষ্ম মানেই আম, তরমুজ, আঙুর, লেবু, জাম, পেঁপে, কাঁঠাল– হাজারো ফলের সমাহার। ভিতর থেকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ফল যেমন খাবেন, তেমনই এগুলিকে যথার্থভাবে ব্যবহার করতে পারলে বাড়িতে বসেই কয়েক মিনিটে আপনার বাইরের ত্বকও হয়ে উঠবে চকচকে, উজ্জ্বল, মসৃণ এবং লাবণ্যে ভরা। কর্মব্যস্ততার কারণে রোজ সম্ভব না হলেও সপ্তাহে অন্তত তিনদিন মিনিট ১৫ সময় দিলেই বাজিমাত। ধুলোবালি, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকে যে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে, তা দূর করতেও ফলের জুড়ি নেই। আসুন জেনে নিই ফলের Seasonal Fruits and Beauty দ্বারা কীভাবে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াবেন।
আম – কথাতেই আছে ‘ফলের রাজা’ হল আম। ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ এই উপাদানটি যেমন চোখের সুরক্ষার জন্য লাভদায়ক, তেমনই ত্বকের জৌলুস বাড়াতেও এটি ভীষণভাবে কার্যকরী। ২ চামচ আমের পালপ্, ১ চামচ মধু, ১ চামচ টকদই আর সামান্য হলুদ একত্রে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিন। তারপর গোটা মুখে লাগিয়ে, হালকা হাতে মিনিট তিনেক মাসাজ করুন। মিনিট ১০-১৫ রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটির নিয়মিত ব্যবহারে সান ট্যান দূর হবে এবং ত্বক হয়ে উঠবে ঝকঝকে।
তরমুজ – শরীরে বাড়তি জলীয় উপাদান সরবরাহের পাশাপাশি শরীরকে ঠান্ডাও রাখে এই ফল। শুধু তাই নয়, পুষ্টিগুণে ভরপুর তরমুজ যে ত্বকের ক্ষেত্রেও ভীষণ উপযোগী, তা বোধহয় অনেকেরই জানা নেই। ২ চামচ তরমুজের শাঁসের মধ্যে ১/২ চামচ মধু আর দেড় চামচ মুলতানি মাটি একত্রে মিশিয়ে মুখে, গলায় ভালো করে লাগিয়ে নিন। মিনিট ১৫ পরে শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন। ত্বক প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
কলা – কোনও ঋতু বিশেষে নয়, কলার চাহিদা বরাবরই তুঙ্গে। এটির ব্যবহারে ত্বকে এক আশ্চর্য রকমের চমক আসে। কলার কাত্থ-এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে মুখ, ঘাড় ও গলায় ভালো করে লাগিয়ে ৫ মিনিট মাসাজ করুন। পরে আরও ৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুলে ফেলুন। এটি ব্ল্যাকহেডস দূর করতেও সাহায্য করে।
আঙুর – পুষ্টিগুণে ভরপুর আঙুর পাচনশক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক, আবার ফেসিয়ালের ক্ষেত্রেও এটি অদ্ভুতরকম ফলদায়ক। আঙুরের রসের সঙ্গে মুলতানির লেই বানিয়ে মিনিট ১০-১৫ মুখে, গলায়, ঘাড়ে, পারলে হাতেও ভালো করে লাগিয়ে রেখে দিন। ধোওয়ার পরে দেখবেন একটা ফ্রেশ লুক চলে আসবে। ত্বক উজ্জ্বল হবে, সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ব্যবহার করে দেখুন হাতেনাতে ফল পাবেন।
পেঁপে – কলার মতো এই ফলটিও সারা বছর পাওয়া যায়। ত্বকের সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য যা যা উপাদান প্রয়োজন, তার সবকটি-ই রয়েছে পেঁপের মধ্যে। রোজ ৪-৫ টুকরো পাকা পেঁপের কাত্থ, ১ চামচ মধু আর ১ চামচ মুলতানি মাটি মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে লাগান। ৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এর নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে ঝলমলে। শুধু তাই নয়, বলিরেখাও পড়তে দেবে না।
কাঁঠাল – পাঁকা কাঁঠালের কাত্থ ত্বকের মসৃণতা ফিরে পাবার জন্য একেবারে আদর্শ। শুষ্ক ত্বকের মেরামতি হবে এই উপাদানে।
পাতিলেবু – গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে বা রোদ থেকে ফিরে ১ গ্লাস পাতিলেবুর রস আপনার সমস্ত ক্লান্তি মুহূর্তেই ধুয়েমুছে সাফ করে দেবে। এছাড়াও লেবুর রস স্কিন টোনিং-এর জন্য একেবারে পারফেক্ট, এটা প্রমাণিত। যুগ যুগ ধরে এই ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করে আসছেন মহিলারা। তবে ত্বকে সরাসরি লেবু অ্যাল্পাই না করে সামান্য মুলতানি মাটির সঙ্গে বেসন, মধু আর টকদই মিশিয়ে মুখে-ঘাড়ে-গলায় লাগান।
মুসম্বি লেবু – ভিটামিন ‘সি’-তে ভরপুর এই লেবুও ত্বকের জৌলুস ফেরানোর জন্য দারুণ কার্যকরী। রোজ একগ্লাস মুসম্বির জুস খেলে তার প্রতিফলন পড়তে বাধ্য আপনার ত্বকে।
ডাবের জল – শরীর ঠান্ডা করার জন্য ডাবের জলের জুড়ি নেই। ডাক্তাররাও মাঝে মাঝে ডাবের জল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ভিটামিন-‘ই’ সমৃদ্ধ এই ফলটি ত্বক পরিচর্যার জন্যও যথাযথ। চাইলে ত্বকে সরাসরিও ব্যবহার করা যায়, নয়তো বেসন অথবা মুলতানি মাটি সহযোগে ত্বকে লাগাতে পারেন।
‘আম’ ফেস প্যাক
– আমকে টুকরো করে গোটা মুখে হালকা হাতে ৫ মিনিট ঘষুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
– ২ চামচ আমের পালপ্, ১ চামচ টকদই আর ১/২ চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে, ঘাড়ে, গলায় লাগান। ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
– ২ চামচ আমের কাত্থ, ১/২ চামচ হলুদ, ১ চামচ টকদই, ১ চামচ কর্নফ্লাওয়ার আর ১ চামচ বেসন মিশিয়ে গাঢ় করে একটা পেস্ট বানান। তারপর মুখের নীচের অংশ থেকে উপরের অংশে ভালো করে লাগিয়ে নিন। এই পেস্ট-টি ত্বকে লাগানোর পরে কথা বলবেন না। ১৫-২০ মিনিট বাদে শুকিয়ে গেলে জলের ছিটে দিয়ে হালকা হাতে ঘষে নেওয়ার পর ধুয়ে নিন। এই প্যাক-টি রাতে শোওয়ার আগে ব্যবহার করলেই ভালো। সকালে একদম ফ্রেশ, তরতাজা, উজ্জ্বল ত্বক অপেক্ষা করে থাকবে আপনার জন্য।
রোদ থেকে ত্বককে বাঁচান
মরশুমি ফল দিয়ে ত্বকচর্চা তো করবেন পাশাপাশি ত্বককে বাঁচাতে রোদে বেরোনোর সময় আরও বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। যেগুলি শুধুমাত্র সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রে থেকেই আপনার ত্বককে সুরক্ষা প্রদান করবে তাই নয়, ত্বকে ট্যানও পড়তে দেবে না। বলিরেখার হাত থেকেও বাঁচাবে।
– সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না। যদি অল্পক্ষণের জন্য বাইরে বেরোতে হয়, সেক্ষেত্রে এসপিএফ ১৫ হলেই চলবে। কিন্তু যদি দীর্ঘক্ষণ বাইরের কাজে থাকতে হয়, সেক্ষেত্রে এসপিএফ ৩০ মাস্ট।
– সানস্ক্রিন যেন অতিরিক্ত চিটচিটে না হয়।
– ডার্মাটোলজিক্যালি টেস্টেড সানস্ক্রিন-ই ব্যবহার করুন।
– রোমছিদ্র বন্ধ না হয়ে যায় তেমন সানস্ক্রিন-ই ব্যবহার করুন।
তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন যে-কোনও ফলের আঠা ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকারক। সেক্ষেত্রে আঠাযুক্ত ফল ত্বকে লাগানো থেকে বিরত থাকুন।